খুলনা বিএনপির তৃণমূলের সংগঠক নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ২৯ বছর এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করেন খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে। ধাপে ধাপে তিনি অনেক দুর এগিয়েছেন। মরহুম স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী দলের কেন্দ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক হুইপ মরহুম মো: আশরাফ হোসেন যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন স্বল্প সময়। সেক্ষেত্রে নজরুল ইসলাম মঞ্জু দীঘদিন দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ সময়ে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছেন।
ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ধাপে ধাপে খুলনা নগর বিএনপির শীর্ষ পদে দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। বিশেষ করে নগর শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর দলকে ঢেলে সাজান। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দলে তার শক্তি বাড়তে থাকে। আলী আজগর লবী একপর্যায়ে নগর শাখার আহবায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এ সময় নজরুল ইসলাম মঞ্জু ছায়া বিএনপি গঠন করেন। দলের তৃণমূল কর্মীদের কাছে টেনে সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী, সাবেক মেয়র শেখ তৈয়েবুর রহমান ও নগর আহবায়ক আলী আজগর লবী এবং শ্রমিকদলের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক নুরুজ্জামান খোকনকে কোনঠাসা করে ফেলেন। কাছে টানেন ভাষা সংগ্রামী নগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাকালীন সভাপতি এম নুরুল ইসলাম, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ঈসা ও হুইপ মোঃ আশরাফ হোসেনকে। সেই থেকে তিনি দলের অপর অংশের সমালোচনার পাত্র হন।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে নগর বিএনপির সম্মেলনে আলী আজগর লবী ও তার অনুসারীদের নয়া কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেননি। শুধু জাফরুল্লাহ খান সাচ্চুকে নগর কমিটির উপদেষ্টা করে সান্তনা পুরস্কার দেন। অথচ ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে মঞ্জুর অনুসারীদের সম্পৃক্ততা তেমন ছিল না। এছাড়া যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও মহিলাদলের কমিটির ক্ষেত্রে তার পছন্দ মতো লোকদের প্রধান্য দিতেন। এক্ষেত্রে তিনি সমালোচিত হন। কাছের সংগঠক আজিজুল হাসান দুলু, শের আলম সান্টু ও হুমায়ূন কবীরের মতো অনেক নেতা দূরে সরে যান।
একটা সময়ে খুলনা বিএনপির অন্যতম সংগঠক কাজী সেকেন্দার আলী ডালিমের দল ত্যাগের জন্য অনেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দোষারোপ করেন। যদিও তিনি পরবর্তীতে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার অনুরোধে আবার ফিরে আসেন। সাবেক ছাত্রদল নেতা রুহুল আজিম রুমির মতো পরিচ্ছন্ন সংগঠকদের রাজনীতি থেকে দূরে চলে যাওয়ার জন্যও মঞ্জুর ভুল দলীয় নীতিকে কেউ কেউ দায়ী করেন। এছাড়া খুলনা নগরে বিএনপি থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের একটি বড় অংশের দল ত্যাগের পেছনেও তাকে সমালোচিত হতে হয়েছে।
দলকে ওয়ার্ড কমিটি থেকে ঢেলে সাজানো, চতুর্থ দফায় মেয়র নির্বাচন, সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরের বিজয়, আইনজীবী সমিতিতে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জয়লাভসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি নন্দিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের পর থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভিন্ন সভা সমাবেশসহ কর্মসূচি পালন তার সফলতার অন্যতম দিক। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক মামলায় কর্মীদের আইনী সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জনসমাবেশে জনবল বৃদ্ধি খুলনার রাজনীতিতে বড় কৃতিত্বের দাবিদার তিনি।
খুলনা গেজেট/ টি আই