দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলা নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জওয়ানদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বাহিনীতে শৃঙ্খলার ব্যত্যয় হলে নিজেদেরই ক্ষতি হয়।
রাজধানীর বিজিবি সদর দপ্তরে রোববার সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবসের আয়োজনে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।
এ সময় বহিঃশত্রু থেকে সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি মাদক ও নারী পাচার এবং বিভিন্ন নির্বাচনে বিজিবি সদস্যদের অবদানের কথাও স্বীকার করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, আপনারা দেশপ্রেম, সততা, শৃঙ্খলা নিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। একটি কথা সবসময় মনে রাখতে হবে, শৃঙ্খলা এবং চেইন অফ কমান্ড শৃঙ্খলা বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। কখনও শৃঙ্খলার ব্যঘাত ঘটাবেন না। তাতে নিজেদেরই ক্ষতি হবে।’
‘চেইন অফ কমান্ড’ মেনে চলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলা প্রতিটি শৃঙ্খলা বাহিনীর অবশ্য কর্তব্য।’
২২৬ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, ১৭৯৫ সালের প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ পরিক্রমায় বিজিবি সুসংগঠিত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সেই রোমহর্ষক ঘটনা। তিনি বলেন, ‘সেই ঘটনায় বিডিআরের ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ প্রায় ৭৪ জন মানুষ শাহাদাত বরণ করেন।’
দ্রুত সময়ে এই ঘটনার বিচার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে আমরা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড আইন, ২০১০ পাস করি। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ঘটনার পর, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল যে বিডিআরকে নতুন একটা নাম দিয়ে আইন পাস করা।’
বিজিবির আধুনিকায়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। জানান, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে তার সরকার।
তিনি বলেন, এই বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা পূনর্বিন্যাস করে পাঁচজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পাঁচটি রিজিয়নে বিভক্ত করা হয়েছে।
সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণে বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশপথে দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এ বাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এবং দেশের সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিলেন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন এবং সম্প্রসারণ করা হয়েছে।’
দেশের সীমান্ত রক্ষায় নারীরাও পুরুষের সঙ্গে সমান তালে কাজ করছেন বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিজিবিতে ৯টি নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে সর্বমোট ৮১৮ জন মহিলা সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে। তারা সফলভাবে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউনিটে যোগদান করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত, সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস জাতির পিতার প্রত্যাশিত, আধুনিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে। বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।’
করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খুলনা গেজেট/এনএম