প্রবল ঘূর্ণিঝড় টাইফুন রাইয়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপাইনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৭৫ জনে। এ ঘটনায় আরও বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ফিলিপাইনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রোববার (১৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গত শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানে শক্তিশালী টাইফুনে রাই। টাইফুনের তাণ্ডবের পর নিহতের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে প্রথমে ১২ এবং পরে ৩৩ বলে জানানো হয়েছিল। পরে সেটি একলাফে কমপক্ষে ৭৫ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
এছাড়া টাইফুন রাই আতঙ্কে বাড়ি-ঘর এবং সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টগুলো থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে গেছেন তিন লাখেরও বেশি মানুষ। বাড়ি-ঘর ছেলে পালিয়ে আসা আশ্রয়হীন ও বিপর্যস্ত মানুষের কাছে সুপেয় পানীয় এবং খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ আরও জোরদার করেছে দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রশাসন।
এএফপি বলছে, টাইফুন রাইয়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড ফিলিপাইনের বহু এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। বহু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া ঝড়ের কারণে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোর বহু বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে এবং বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোও উপড়ে গেছে।
ফিলিপাইনের বহল অঞ্চলের গভর্নর আরথার ইয়াপ নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে জানিয়েছেন, তার এলাকার শহরগুলোর মেয়ররা ৪৯ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এতে করে টাইফুনের আঘাতে নিহতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ জনে।
দেশটির আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, গত বৃহস্পতিবার সিয়ারগাও দ্বীপে আছড়ে পড়া রাই ছিল মূলত ‘সুপার টাইফুন’। ওই সময় ওই দ্বীপে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার (১২০ মাইল)। আর শুক্রবার সকালে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার।
আরথার ইয়াপ বলছেন, তার এলাকায় এখনও ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া রাইয়ের তাণ্ডবে আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। তার ভাষায়, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও কার্যত বিচ্ছিন্ন। আমার এলাকার ৪৮ জন মেয়রের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২১ জনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পেরেছি। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
এদিকে টাইফুনের আঘাতে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোতে হতাহতদের খোঁজে তল্লাশি এবং আটকে পড়াদের উদ্ধারে কার্যক্রম জোরদার করেছে ফিলিপিনো প্রশাসন। এ কাজে সামরিক বাহিনী, পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের হাজার হাজার সদস্যকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
ফিলিপাইনে জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল থাকে। মূলত বছরের বেশিরভাগ টাইফুন এই সময়ের মধ্যেই হয়ে থাকে। তবে রাই আঘাত হেনেছে এমন সময়ে, যখন দেশটিতে বর্ষাকাল শেষ হয়েছে প্রায় দু’মাস আগেই।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ুগত দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর একটি হলো ফিলিপাইন। প্রতিবছর গড়ে ২০টি টাইফুন দেশটির বিভিন্ন অংশে আঘাত হেনে থাকে।