খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

খুমেক হাসপাতালে অপারেশনের সিরিয়াল পাওয়া যেন সোনার হরিণ

সাগর জাহিদুল

ব্যাথায় কাতর দিঘলিয়া উপজেলার মোকামপুর ঘাট এলাকার হিরা বেগম। হাতের ব্যাথা নিয়ে গেল মাসের ১৬ তারিখে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তির পর কয়েক দফা হাতে অস্ত্রপচারের কথা দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু এ পর্যন্ত তার অপারেশন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়নি।

একই সময়ে ওই বিভাগে ভর্তি হন বটিয়াঘাটা উপজেলার ভান্ডারকোর্ট ৫ নং ইউনিয়নের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। তিন মাস আগে নলকূপ থেকে পানি আনতে গিয়ে কলের হাতলে আঘাত লেগে তার হাত ভেঙ্গে যায়। ভর্তি হন সার্জারি বিভাগে। জানানো হয় অপারেশনের কথা, কিন্তু কবে হবে তা তিনি জানে না।

শুধু হিরা বেগম ও ফাতেমা বেগম নয়, এরকম অনেকেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে সুস্থতার প্রহর গুনছেন। কিন্তু কিছুতেই সেখানে তাদের চিকিৎসা মিলছে না। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে অনেকের পরিবারের সদস্যরা তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেও দিয়েছে। হাসপাতালে তারা কোন রকমে দিন পার করছেন বলে জানা গেছে।

দিঘলিয়া উপজেলার হিরা বেগম জানান, গত দু’মাস আগে হঠাৎ তার ডান হাতের কব্জির উপরে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে তিনি স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পর কয়েকদিন সুস্থ থাকার পর আবার ব্যাথা ওঠে। এরপর তিনি খুলনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসদের পরামর্শে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ধরা পড়ে তার হাতের হাড়ের সাথে টিউমার হয়েছে। সেখান থেকে তাকে বলা হয় এর চিকিৎসা এখানে হবে না, ঢাকায় যেতে হবে। স্বল্প আয়ে এত বড় খরচ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেখান থেকে ১৬ নভেম্বর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের অর্থপেডিক বিভাগের প্রধান ডা: মেহেদী নেয়াজের সাক্ষাত পান। তাকে জানানো হয়, এ চিকিৎসা খুলনায় থেকে করা সম্ভব। অপারেশনের জন্য তারা প্রস্তুত নিতে থাকে। কয়েক দফা অপারেশনের জন্য প্রস্তুতিও তারা নেয়। কিন্তু কি কারণে তারা এ অপারেশনের সিরিয়াল এখনও পায়নি তার প্রকৃত কারণ তারা জানতে পারেনি। সামান্য আয়ে তাদের পক্ষে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি আরও জানিয়েছেন।

ফাতেমা বেগমের স্বামী আবু তালেব মল্লিক পেশায় একজন কৃষক। গত একমাস ধরে তিনি স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ে রয়েছেন। বার বার চিকিৎসকরা অপারেশনের কথা বললেও দেখা মিলছেনা সেই সময়ের। স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো ঋণ করেছেন। কথা বলার সময় বার বার কাঁদছিলেন।

দু’মাস আগে তার স্ত্রীর হাত ভেঙ্গে যায়। সে সময় তিনি খুলনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন তখন ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালে ডাক্তারের সহকারীর সহায়তায় হাতে প্লাষ্টার করেন। এরপরও তার হাতে ব্যাথা কমেনি। তিনি পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তির দু’দিন পর তাকে জানানো হয় অপারেশনের কথা। প্রস্তুতি নিয়েও তা করাতে পারছেন না।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান জানান, জনবলের সংকট রয়েছে হাসপাতালে। দু’শ ৮৫ জনের বিপরীতে একশ’ ৫১ জন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। একটা অপারেশনের জন্য এনেসথেসিয়া বিভাগের প্রয়োজন হয়। এ বিভাগের কোন প্রফেসর নেই। এসোসিয়েট দু’জন ও জুনিয়ার কনসালটেন্ট দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অর্থপেডিকদের অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার করার জন্য সপ্তাহে একদিন দেওয়া হয়। অর্থপেডিকে একশ’ ৪০ জনের মতো রোগী রয়েছে। এরমধ্যে আবার সরকারি ছুটি বেঁধে গেলে তা আবার পিছিয়ে যায়। তবে এ সংকট বেশী দিন স্থায়ী হবে না বলে জানিয়েছেন।

খুলনা গে‌জেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!