খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

মহাসড়কের বাকে ঘটছে দুর্ঘটনা, মরছে মানুষ

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া

খুলনা থেকে সাতক্ষীরার দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। এই মহাসড়কের সিংহভাগ গেছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার উপর দিয়ে। আর এই ৬৪ কিলোমিটার সড়কে প্রায় শতাধিক স্থানে রয়েছে বাক বা মোড় (টার্ণিং পয়েন্ট)। এর মধ্যে কিছু কিছু বাক আছে যা দূর থেকে বোঝা দায়।

এ বাক বা মোড়ের কারণে প্রতিনিয়ত মহাসড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝরছে তাজা প্রাণ। এ যেন মৃত্যুর মিছিল। যে মিছিল প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে। খালি হচ্ছে হাজারো মায়ের বুক।

সর্বশেষ ১৩ ডিসেম্বর চুকনগর-খুলনা মহাসড়কের চাকুন্দিয়া গ্রামের দোকানঘর নামক স্থানে মৃত এরশাদ আলী শেখের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৬৫) ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এর আগে ৮ অক্টোবর ডুমুরিয়া মহিলা কলেজ মোড়ে ও জিলেরডাঙ্গা এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়। আহতও হয়েছিল বেশ কয়েকজন।

৫ অক্টোবর চুকনগর-খুলনা মহাসড়কের খর্ণিয়া সেতুতে ট্রাকে ত্রিখণ্ডিত হয়ে এক বৃদ্ধ নিহত হন। ২৮ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক গ্রাম্য চিকিৎসক নিহত হন। ১৮ মার্চ এ সড়কের কাঁঠালতলা বিশ্বাস বাড়ির সামনে ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ডিজিএফআই কর্মকর্তা তারিয়েফ সুনাম দীপ (৩০) মারা যান। প্রায় প্রতিদিনই এভাবে মহাসড়কে কারো না কারো প্রাণ ঝরছে।

২০০৭ সালের ১৬ মার্চ এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ডুমুরিয়া উপজেলার বালিয়াখালি ব্রিজের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান জাতীয় দলেন ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানা। সাজ্জাদুল হাসান সেতু নামের প্রথম শ্রেণির আরেক ক্রিকেটার।

খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য মতে, চলতি বছরে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ডুমুরিয়ার অংশে। সেখানে প্রায় প্রতি ৩দিনে গড়ে একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

তাদের পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত খুলনা বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৮৫টি। আর খুলনা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৯৮টি। এরমধ্যে শুধু খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ডুমুরিয়া অংশে( খুলনার জিরোপয়েন্ট হতে আঠারমাইল বাজার পর্যন্ত) সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮৯টি। এতে ঘটনাস্থল থেকে ৭জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে তারা। এছাড়া আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে ১৫১জনকে। আহতদের অনেকে আবার হাসপাতালে মারা গেছে। যার হিসাব পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে তারা ডুমুরিয়ার বালিয়াখালি সেতু, কাঁঠালতলা, খর্ণিয়া, চাকুন্দিয়া মাদ্রাসা দোকানঘর ও গুটুদিয়াকে বিপদজনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

তবে অনুমোদনহীন নছিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, ট্রলি, ইজিবাইক দেদারছে চলাচল করার কারণেও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।

এছাড়া সড়কটি ভাল হওয়ায় বা রাস্তার ভাল হওয়ায় ড্রাইভাররা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে এ রাস্তায়। এসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। যেসব কর্তৃপক্ষকে এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারাও উদাসীন।

এদিকে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ডুমুরিয়ায় আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হওয়ার পর নড়ে চড়ে বসেছেন উপজেলা প্রশাসন।

দুর্ঘটনা রোধকল্পে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অতিরিক্ত বোঝাই, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের সহযোগিতায় রাস্তার কিছু গাছের ডালপালা কেটে রাস্তা দৃশ্যমান করার কাজ থেকে শুরু হবে শীঘ্রই। ১৩ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর সমন্বয়ে মিটিং করে উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি মহিদুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মৃত্যুর খবর আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে সড়কে মৃত্যুর ঘটনা। বহু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে রাস্তায়। যে গুলো নিয়ন্ত্রণ করলে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।

খর্ণিয়া (চুকনগরস্থ) হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, লাইসেন্সহীন অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া। আর এদের মধ্যে চলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। নিয়ম না মেনে ওভারটেকিং। যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো। পেছনের বাসকে সামনে আসতে না দেওয়ার প্রতিযোগিতা। আবার অনেক চালক দিয়ে রাত-দিন গাড়ি চালায়। এজন্য ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে।

 

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!