জমিজমা বিরোধের জের ধরে প্রকাশ মিস্ত্রি ও তার স্ত্রীর ওপর হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। তাদের রক্ষা করতে গিয়ে মারা যান বটিয়াঘাটা উপজেলার বিত্তিশালুয়া বয়ারডাঙ্গা গ্রামের মৃত মহেন্দ্র মন্ডলের মেয়ে তিলোত্তমা মন্ডল পুতুল। সন্দেহের তীর প্রকাশ মিস্ত্রির সৎ ভাইদের প্রতি। আলোচিত এ ঘটনায় মামলার প্রস্ততি চলছে বলে বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ জানিয়েছে।
হামলায় আহত প্রকাশ মিস্ত্রি জানান, তার বাবার দুই বিয়ে। দুই ঘরে বাবার একাধিক সন্তান রয়েছে। বড় ঘরের সন্তানরা চায় না তারা সম্পত্তির ভাগ পায়। এ নিয়ে অনেক আগে থেকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় তাদের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরের একটি জায়গা নিয়ে। যার বর্তমান মূল্য দুই কোটি টাকা। এ জমি নিয়ে প্রায়ই তাকে সৎ ভাইরা হুমকি দিত। কোন দিনও তিনি কর্নপাত করেনি। কিন্তু তারা যে এভাবে তার ওপর হামলা করবে তা কখনও ভাবেননি তিনি।
তিনি আরও জানান, রোববার রাতে তিনি ও স্ত্রী দিপিকা মিস্ত্রি বারান্দায় শুয়ে ছিলেন। ভোর পৌনে চারটার দিকে ১১ জনের একদল সন্ত্রাসী তাদের বাড়ির চারিদিকে ঘিরে ফেলে। দুর্বৃত্তরা প্রথমে তাদের দু’জনকে ডেকে বাইরে বের করে নেয়। এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদেরকে আঘাত করতে থাকে। বাইরের চিৎকার শুনে পুতুল ঘরের ভেতর থেকে উঠানে আসে পুতুল। সন্ত্রাসীরা বিভক্ত হয়ে তাদের তিনজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি দৌঁড়ে নিকট প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে আশ্রায় নিয়ে তাকে ঘটনাটি খুলে বলে। ওই প্রতিবেশী এলাকাবাসিকে খবর দিলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তিনি দু’জন বাদে সকল আসামিকে চিনেছেন। রাতে আঘাত করে সকালে আসামিরা তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে আসে। পুলিশের উপস্থিতি দেখে তারা সটকে পড়ে। দুর্বৃত্তদের মধ্যে দু’জনকে তিনি চেনেনা। দিপিকার অবস্থা আশংকাজনক। তার শরীরে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তার সম্পুর্ণ শরীরের অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
প্রকাশ মিস্ত্রির ছোট ভাই প্রবীর মিস্ত্রি এ প্রতিবেদককে জানান, বটিয়াঘাটার একদাগে দু’বিঘার একটি জমি নিয়ে সৎ ভাইদের সাথে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বিচারও হয়েছে। কিন্তু এ দ্বন্দ্ব মেটেনি। গত এক সপ্তাহ আগে বড় ভাই তার কাছে গিয়েছিলেন। তার ওপর হামলার শঙ্কার কথাও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু এভাবে তার ওপর যে হমলা করা হবে তাবে কখনও তার চিন্তায় আসেনি। তিনি এঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।
অপরদিকে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত তিলোত্তমা মন্ডল পুতুলের ভাইপো বিভাষ মন্ডল জানান, স্বামী পরিত্যাক্তা নারী তিনি। তার কোন ছেলে মেয়ে নেই। যে যখন আমন্ত্রণ করে তাদের কাছে তিনি ছুটে যেতেন। তিনি একজন নিরাপরাধ নারী ছিলেন। গত শুক্রবার প্রকাশ মিস্ত্রি বাড়িতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি হাটবাটা চলে যান। সোমবার ভোর রাতে তাকে ফোন করে জানানো হয় তার পিসি মারাত্মকভাবে আহত। এসে দেখি তিনি মারা গেছেন। ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ লাশ তার কাছে বুঝিয়ে দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাটিয়াঘাটা থানার এসআই প্রভাষ সোমবার সন্ধ্যয় এ প্রতিবেদককে জানান, মামলার প্রস্তুতি চলছে। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পুতুলের মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে নিহতের ভাইপো বিভাষ মন্ডলকে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএ