খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

ফাইভ-জি যুগে বাংলাদেশ

গেজেট ডেস্ক

ডিজিটাল বাংলাদেশের বর্ষপূর্তির দিনে দেশ যুক্ত হলো মোবাইল নেটওয়ার্কের সবশেষ প্রযুক্তি ফাইভ-জি তে। রাজধানীর হোটেল রেডিসনে রোববার (১২ ডিসেম্বর) ফাইভ-জি প্রযুক্তির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত হন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সাহাব উদ্দিন।

এছাড়া হুয়াওয়ের পক্ষে হুয়াওয়ের আঞ্চলকি প্রধান সিমন লিন ও হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝাং ঝেংজুন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানায়, প্রাথমিকভাবে ছয়টি এলাকায় ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়। এলাকাগুলো হলো- রাজধানী ঢাকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর, বাংলাদেশ সচিবালয়, জাতীয় সংসদ এবং ঢাকার বাইরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও টুঙ্গিপাড়া। পরবর্তীতে দেশের দুশ’ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ প্রযুক্তি চালুর কথা রয়েছে।

এর আগে শনিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘আগামী বছরের মার্চে বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ নিলামে দেয়ার পর বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর এ প্রযুক্তি চালু করবে। ২০২২ সালের পর টেলিটক ও বিটিসিএল দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, বিশেষ করে স্পেশাল ইকনোমিক জোনগুলোতে এই সেবা চালুর প্রস্তুতির কাজ করছে।’

‘এখন আমরা ফাইভজি যেটা চালু করছি, এটার ফার্স্ট স্ট্যান্ডার্ডটা আমরা ফলো করছি। এটার সেকেন্ড স্ট্যান্ডার্ডের কাজ হচ্ছে। ২০২২ সালে হয়তো সেটা রিলিজ হবে। আমরা সেকেন্ড স্ট্যান্ডার্ডটা ফলো করবো।’

দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোনের চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি বা ফোর-জি চালু রয়েছে। ফাইভ-জি’র অভিজ্ঞতা নিতে হলে প্রচলিত স্মার্ট ফোন বদলে এই প্রযুক্তিসম্পন্ন মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার করতে হবে। থ্রি-জি থেকে ফোর-জিতে আসার সময় মোবাইল ফোনের সিম বদলানোর যে বাধ্যবাধকতা ছিল ফোর-জি থেকে ফাইভ-জিতে আসতে সেই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না।

ফাইভ-জি সুবিধাসম্পন্ন মোবাইল ফোন মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে রাখতে দেশে ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই এই ফোনগুলো বাজারে আসবে।

ফাইভ জি সেবা দিতে মোট ব্যান্ডউইডথ বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৬০ মেগাহার্টজ। এর মধ্যে টেলিটক ব্যবহার করছে ৬০ মেগাহার্টজ। ব্যান্ডউইডথের জন্য টেলিটকের কাছ থেকে কোনো টাকা নিচ্ছে না বিটিআরসি। বাকি ৪০০ মেগাহার্টজ মার্চে নিলামের মাধ্যমে বেসরকারি অপারেটরদের বরাদ্দ দেয়া হবে।

দেশে ফাইভজি চালু হলে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। সেসবের মধ্যে বিশেষ দশটি বিষয় হলো-

ডাউনলোড স্পিড: ফাইভ-জিতে প্রতি সেকেন্ডে ডাউনলোড স্পিড ১০ থেকে ৫০ গিগাবাইট। ফোর-জিতে এই গতি ১০ থেকে ২০ মেগাবাইট। অর্থাৎ ফোর-জির চেয়ে ফাইভ-জির গতি ১০০ থেকে ২৫০ পর্যন্ত গুণ বেশি হবে। এ গতিতে নেটফ্লিক্সে ৮কে রেজুলেশনের ৪০০ সিনেমা একবারে দেখা যাবে।

ল্যাটেন্সি কম: তথ্য আদান-প্রদানে সময়ের ব্যবধানই ল্যাটেন্সি। ফাইভ-জিতে এই ল্যাটেন্সি রেট অনেক কম। ফোর-জি তথ্য পাঠায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিসেকেন্ডের ভেতর। ফাইভ-জি এই সময় কমিয়ে আনবে ১ মিলিসেকেন্ডে। ফলে কাঙ্ক্ষিত তথ্য মিলবে রিয়েল টাইমে।

স্বয়ংক্রিয় গাড়ি: স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ফাইভ-জি ব্যবহার করে ট্রাফিক সিগন্যাল ও রোড সেন্সরের সঙ্গে সমন্বয় করবে। রাস্তার অন্য গাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারবে। একটি ঘটনায় মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখাতে সময় লাগে ২০০ মিলিসেকেন্ড। ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে প্রতিক্রিয়া দেখাতে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সময় লাগবে ১ মিলিসেকেন্ড। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।

যানবাহন চালানো: আগামী দিনে স্বয়ংক্রিয় বা দূর নিয়ন্ত্রিত ট্রেন, ডেলিভারি ট্রাক ও প্লেন চালাতেও ফাইভ-জি একই সুবিধা দেবে।

রোবটের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার: শুধু যানবাহন নয়, ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকেও রোবোটিক ডিভাইস দিয়ে অস্ত্রোপচার সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞ সার্জনরা রোবট দিয়েই জরুরি অবস্থায় সময় ও দূরত্ব কমাতে পারবেন।

রোবটের কাজ: ফাইভ-জির কারণে ফ্যাক্টরিতে রোবটের সংখ্যাও বাড়বে। তারা একে অন্যকে নিজেদের কাজ ও স্থান সম্পর্কে জানাতে পারবে। এতে তাদের সক্ষমতা আরও বাড়বে।

ড্রোন দিয়ে কৃষিকাজ: ড্রোনের বহর দিয়ে কৃষিকাজও হবে। দূর নিয়ন্ত্রিত ড্রোন দিয়ে ফসল বাছাই করে তোলা যাবে। সার ও পানিসচে দেয়াও সম্ভব হবে।

ভিআর গেইমিং: ভিআর হেডসেট পরে রিয়েলটাইমে খেলা যাবে জনপ্রিয় গেম ফোর্ট নাইট ব্যাটেল। ল্যাগের কারণে কোনো বাধাও আসবে না। ফাইভজি ব্যবহারে পিসি ও গেমিং কনসোল থেকে সফটওয়্যার সরিয়ে ক্লাউডে রাখা যাবে। ক্লাউড সেবা নিলে দিতে হবে সাবস্ক্রিপশন ফি। এতে গেমারদের আর দামি ডিভাইস কিনতে হবে না।

এআর: অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। ফলে ভার্চুয়াল অনেক কিছু আমরা আমাদের আশপাশেই দেখতে পারব।

পণ্য ডেলিভারি: ই-কমার্স ও কুরিয়ার কোম্পানিগুলো ড্রোন দিয়েই পণ্য ডেলিভারি দেবে। আগামী দিনে বাড়ির দরজায় পণ্য নিয়ে হাজির হবে ড্রোন।

আইওটি: স্মার্টহোমে ব্যবহৃত ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসগুলো সার্বক্ষণিক ফাইভ-জিতে যুক্ত থাকবে। ল্যাটেন্সি রেট কম বলে এতদিন ফোর-জি দিয়ে রিয়েলটাইমে আইওটি ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ছিল না। এই সমস্যা এড়ানো যাবে ফাইভ-জিতে। সব আইওটি ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে রিয়েল টাইমে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!