বাগেরহাট সদর উপজেলোর বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের সিংগা এলাকায় বয়স বৃদ্ধি করে ১১ বছর বয়সী কিশোরীকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে বয়স বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করেছেন বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কৃষ্ণপদ বিশ্বাস। ইউনিয়ন পরিষদ প্রদত্ত জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে তিন দফায় ওই কিশোরীকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তার পরিবার। তবে পরিবারের অন্যায় চেষ্টা ও অসাধু ইউপি সদস্যের বিচারের দাবিতে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মককর্তা বরাবর আবেদন করেছেন ওই কিশোরীর বড় ভাই অসিম বিশ্বাস।
অসিম বিশ্বাস বলেন, আমার ছোট বোন ছোট সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য কৃষ্ণ পদ বিশ্বাস ও তার সহযোগী উৎসব রায় কোন আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে আমার মা গীতা বিশ্বাসকে ভুল বুঝিয়ে অর্থের বিনিময়ে আমার বোনের ভুয়া জন্ম সনদ ও টিকা কার্ড তৈরি করে। তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১০ গোপন করে ৭ জুলাই ২০০৩ হিসেবে ভুয়া টিকাকার্ড জন্ম তারিখ করে দিয়েছে ইউপি সদস্য কৃষ্ণ পদ বিশ্বাস। ভুয়া জন্মসনদ অনুযায়ী সোমবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আমার বোনকে একই গ্রামের নিলয় মৃধার ছেলে দিবস মৃধার সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি জানতে পারলে তিনি বিয়ে বন্ধ করে দেন।
পরবর্তীতে স্থান পরিবর্তন করে পাশ্ববর্তী পাতিলাখালি গ্রামে আমার মামার বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করেন। এই আয়োজনও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়। পরে পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর উপজেলার শেখ মাটিয়া গ্রামে বিয়ের আযোজন করলে উপজেলার প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাও বন্ধ হয়। কিন্তু বোনের বাল্য বিবাহ বন্ধের প্রশাসনকে অবহিত করার কারণে ইউপি সদস্য বিষ্ণপদ বিশ্বাস ও বিয়ের পাত্র দিবস মৃধাসহ তার লোকজন বিভিন্ন ভাবে আমাকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। আমার মাকে ভুল বুঝিয়ে ঘরে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই ভুয়া জন্ম সনদ করা হয়েছে।
ছোট সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পিযুষ অধিকারী বলেন, চতুর্থ শ্রেণির একটি মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আইন লঙ্ঘনের সাথে সাথে ওই মেয়ের জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার শামিল। যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
ইউপি সদস্য কৃষ্ণ পদ বিশ্বাস বলেন, নিলয় মৃধার ছেলে দিবস মৃধা আমার কাছে জন্ম সনদের কাগজ নিয়ে আসলে আমি সই করে দিয়েছি। টাকার বিনিময়ে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট।
বিষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমডি মাসুদ রানা বলেন, অনেকেই জন্ম সনদসহ নানা সেবার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আসেন। সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে যাচাইয়ের সুযোগ আমার থাকে না। যার কারণে জন্ম নিবন্ধনে সচিবের স্বাক্ষরের পাশাপাশি স্থানীয় ইউপি সদস্যের যাচাই ও স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করেছি। বিতর্কিত ওই জন্মনিবন্ধন সনদ আমার পরিষদের। কিন্তু স্থানীয় চকিদার, ইউপি সদস্য ও সচিব শনাক্তের পরে আমি স্বাক্ষর করি। ওই তিন ব্যক্তি কোন কাগজের ভিত্তিতে শনাক্ত করলেন এবং স্বাক্ষর দিলেন এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বাল্য বিয়ের আয়োজনের কথা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরে কয়েক দফায় স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্ধ করা হয়েছিল। ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে ভুয়া জন্মসনদ তৈরির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম