মোঃ আব্দুল গফফার পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। চাকুরি জীবনে অবসর নিলেও তিনি কর্মময় জীবন থেকে তার অবসর নেন নাই। জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে তিনি কাজে লাগাচ্ছেন। সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছেন।বর্তমানে তিনি কৃষি কাজের মাধ্যমে অবসর সময় পার করছেন।
শিক্ষক আব্দুল গফফার ১৯৫৯ সালে পাইকগাছার সীমান্তবর্তী কয়রার মসজিদকুড় গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত মোনতাজ আলী সানা ছিলেন একজন আদর্শ সফল কৃষক। লেখাপড়া শেষ করে আব্দুল গফফার ১৯৮৩ সালে শিক্ষক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। বাগেরহাট জেলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা জেলা স্কুল সহ অনেক স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুনামের সহিত শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৮ সালের ২৮ জুন পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
শিক্ষকতা জীবনে তিনি যে সব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেছেন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তাকে স্কুল রেখে কখনো কোন মিটিং এ অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। স্কুল চলাকালীন সময় তিনি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছেন। লেখাপড়ার মান উন্নয়নের পাশাপাশি স্কুলের শৃংখল পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষক আব্দুল গফফারের অবদান প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আজও স্মরণ করে।
সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জানায়, লেখাপড়া জীবনের আদর্শ কি সেটা গফফার স্যারের কাছে শিখতে হবে। স্কুল জীবনের আদর্শের আরেক নাম গফফার স্যার বলে মন্তব্য করে শিক্ষার্থী ওয়াসিফ গফুর। সচরাচর চাকুরি জীবন শেষ করার পর প্রতিটি মানুষকে পরিবার পরিজনকে সময় দেওয়া কিংবা অলস সময় পার করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শিক্ষক আব্দুল গফফার।
তিনি অবসর জনিত সময়কে কাজে লাগাতে জন্মস্থান মসজিদকুড়ে নিজের দুই বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত চাষ ব্যবস্থাপনার কৃষি খামার। যার এক বিঘা জমিতে পুকুর খনন করে সেখানে চাষ করেছেন রুই, কাতলা, মৃগেল ও গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। খামারের সীমানা দিয়ে রয়েছে ৩০টি’র মতো নারিকেল গাছ। আর পুকুরের পাড়ে চাষ করেছেন বেগুন, টমেটো, সিম, চিচিঙ্গা, শসা, ঝিঙ্গা, লাউ, মিষ্টি কুমরা, বরবুটি, পুইশাক, চালকুমরা, ধুন্দল, ঢেড়স, করল্লা ও কচু সহ হরেক রকম সবজি।
নিজেই পরিচর্যা করার পাশাপাশি কৃষি খামারটি দেখভাল করার জন্য তিনি দুইজন শ্রমিক রেখেছেন। প্রতিটি সবজির ফলন অনেক ভালো। উৎপাদিত সবজি পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে প্রতিদিন তিনি বাজারে বিক্রি করে থাকেন। অবসর প্রাপ্ত এ শিক্ষক এখন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। প্রতিদিন কমবেশি লোকজন কৃষি খামারটি দেখতে আসেন।
পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমরুল ইসলাম জানান, স্যার আমাদের একজন ভালো অভিভাবক ছিলেন। তার সঙ্গে কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। তিনি শিক্ষকের ন্যায় একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। আমরা শিক্ষকরা সময় পেলে মাঝে মধ্যে স্যারের কৃষি খামারটি দেখতে যায়।
সবুজ ফসলের সমারোহ দেখে খামার থেকে ফিরে আসতে মন চাই না বলে মন্তব্য করেন আরেক শিক্ষক ইসমাইল হোসেন।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষক আব্দুল গফফার বলেন, কৃষি আমার রক্তে মিশে রয়েছে। আমার বাবা একজন সফল কৃষক ছিলেন। ছাত্র জীবনে বাবার সাথেই কৃষি কাজে সময় দিয়েছি। কৃষি জমির সৎ ব্যবহারের কথা চিন্তা করে এ খামারটি গড়ে তুলেছি। এর মাধ্যমে অবসর সময়টা কাজে লাগাতে পারছি।
সময়টাও ভালো কাটছে, পাশাপাশি বাড়তি কিছু আয়ও হচ্ছে। করোনা কালের বেকারত্ব দুরীকরণে কৃষি কতটা ভূমিকা রাখতে পারে এ প্রসঙ্গে শিক্ষক আব্দুল গফফার বলেন, দেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। এমন সময় মহামারী করোনা আমাদের অনেক ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এখন আমাদের উত্তোরণের পথ খুঁজতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমন্বিত কৃষি কাজ ব্যবস্থাপনা অন্যতম মাধ্যম হতে পারে বলে প্রাক্তন এ শিক্ষক মন্তব্য করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম