গেল মার্চের শুরুতে যখন দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, তখন খুলনায় একটি আরটি পিসিআর মেশিন স্থাপনের জোর দাবি ওঠে। খুলনার সরকারি হাসপাতালগুলোও তখন ভাইরাসের তীব্রতায় নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ল্যাব স্থাপনে অনাগ্রহ দেখায়। সে সময় হাতে গোনা যে কয়েকজন চিকিৎসক নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ডাঃ এসএম তুষার আলম।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগে থেকে ভাইরোলোজি বিভাগ না থাকায় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হিসাবে তার পরিকল্পনায় তৈরি হয় বায়োসেফটি ল্যাব। নিজেই স্বশরীরে দক্ষ প্রকৌশলীর মত ইন্টোরিয়ার ডিজাইন করে মাত্র তিন দিনেই ল্যাবের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে আরটি পিসিআর স্থাপন করেন তিনি। কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ এবং নিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের সাথে পরামর্শ করে সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে প্রথম দিকেই পরীক্ষা শুরু করেন।
করোনা ল্যাবের মূখপাত্রের দায়িত্ব নিয়ে মাত্র ১ জন অভিজ্ঞ টেকনোলোজিষ্ট এবং ৫ জন পিসিআর ল্যাবে অনভিজ্ঞ টেকনোলোজিষ্ট নিয়ে ৭ এপ্রিল থেকে শুরু করেন পুরো বিভাগের মানুষের করোনা পরীক্ষা। এরপর থেকে ঈদ বা রোজা, শুক্রবার কিংবা সরকারি ছুটির দিনই হোক না কেন একদিনের জন্যও নমুনা পরীক্ষা থেমে থাকেনি। একটি মাত্র পিসিআর মেশিনে যেখানে পরীক্ষার সক্ষমতা মাত্র ৯৬টি, সেখানে দিনে তিন থেকে চারবার বা তারও বেশিবার রান দিয়ে করোনা পরীক্ষার চাহিদা পুরণ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৫শ’র বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। খুলনা বিভাগের বাইরে থেকেও প্রতিনিয়িত এই ল্যাবে নমুনা পাঠায় সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য।
সারাদেশে করোনা পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর সরকার কর্তৃক মাত্র ১৫টি ল্যাবকে মান বিবেচনায় বিদেশগামী মানুষের করোনা পরীক্ষার জন্য মনোনীত করেছেন তার মধ্যে অন্যতম খুলনা মেডিকেল কলেজের ল্যাবটি। ডাঃ তুষার শুধুমাত্র ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করেন না, পরীক্ষার যাবতীয় রিপোর্ট প্রস্তুত ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে তা সঠিক সময়ে নির্ভূলভাবে পাঠানো তার দায়িত্বের একটি অংশ।
ঝিনাইদহ জেলায় জন্ম নেয়া ডাঃ তুষার লেখাপড়াও করেছে খুলনা মেডিকেল কলেজে। নিজে যে কলেজে লেখাপড়া করেছে দীর্ঘ সময় সেই কলেজে তিনি এখন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক। একই সাথে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। ব্যক্তিগত জীবনে এক কন্যা সন্তানের জনক ডাঃ তুষার করোনা শুরুর পর থেকে ঠিকমত পরিবারকে সময়ও দিতে পারেন না।
ডাঃ তুষার কোনভাবেই কারও থেকে বেশি কৃতিত্ব নিতে চাননা। তিনি বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজে করোনা পরীক্ষায় ল্যাবে যে কয়জন জনশক্তি কাজ করে সবাই অনেক পরিশ্রম করে। চিকিৎসকদের পাশাপাশি ল্যাব টেকনোলোজিষ্ট থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত সবাই সমানভাবে কাজ করে।
তিনি বলেন, যদি কাউকে কৃতিত্ব দিতে হয় দিতে হবে মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ শাহানাজ পারভীন ম্যাডামকে। তিনি এককভাবে নিরলস পরিশ্রম করে সবকিছু সমন্বয় করে চলেছেন। সবাইকে তার জন্য দোয়া করা উচিত। তিনি খুূলনার মানুষকে অপ্রয়োজনে পরীক্ষা থেকে বিরত থেকে সত্যিকারের যাদের প্রয়োজন তাদের পরীক্ষার জন্য আসা উচিত বলে মন্তব্য করে।
খুলনা গেজেট / এমবিএইচ/এমএম