করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আজ ৩১ অক্টোবর শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাস করেছেন। এর আগে গত ১৮ এবং ২৬ অক্টোবর শর্তসাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ টি আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষার্থাদের হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পর এবং সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ায় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। আজ সকল ডিসিপ্লিনেই কমবেশি ক্লাস বা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে ক্লাস শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তার আগেই ক্যাম্পাস ও পরে ক্লাসে হাজির হন। উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন নিজেই ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন। তিনি ম্যানগ্রোভ ইকোলজি এন্ড কোস্টাল অ্যাফরেষ্টশন বিষয়ে ক্লাস নেন। ওই ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো শতভাগ বলে জানা যায়।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, এতদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে অনুভূতিটা অন্যরকম। হল খোলার পর ক্লাস পরীক্ষা শুরু হওয়া আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। ইংরেজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, দীর্ঘসময় পর প্রিয় শিক্ষক ও সহপাঠীদের ক্লাসে ফিরে পেয়ে আমরা অনন্দিত। করোনার দিনগুলো শেষে আবারও ক্যাম্পাসে গল্প-আড্ডা জমবে ভাবতেই ভালো লাগছে। এই দেড় বছরে ক্যাম্পাসে পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে।
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. শেখ জুলফিকার হোসেন ক্লাস নেন সকাল ৯টায় ১ম বর্ষের ২য় টার্মের। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরাই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। দীর্ঘ সময় ধরে করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরণের শূন্যতা বিরাজ করতো। সব কিছু স্থবির মনে হতো, যদিও অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু সশরীরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, তাদের ক্লাস নেওয়া, ল্যাবে যাওয়ার গুরুত্বটাই আলাদা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান স্কুলের ডিন ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সশরীরে উপস্থিতি ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় স্বরূপ ফিরেছে। ক্যাম্পাস প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে গেছে। করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা যে তিনটার্ম বা দেড় বছর পিছিয়েছে তা কভার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সক্রিয়ভাবে দেখছেন, পরিকল্পনা করছেন। ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধানদের সাথে এ নিয়ে তিনি মত বিনিময় করেছেন। আশা করা যায় আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গ্যাপ পূরণ করে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সেশনজটহীন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্যে ফিরে যাবে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের করিডোরে, ক্যান্টিন, শহিদ মিনার, মুক্তমঞ্চ, অদম্য বাংলার পাদদেশে, তপনের দোকান, সবুজ বৃক্ষের ছায়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ক্যাম্পাস ছিলো মুখরিত।
খুলনা গেজেট/ টি আই