প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনের সাবেক এমপি কারাবন্দী জননেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পিতা মিয়া আব্দুল হামিদের (৯০) জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার যোহরবাদ শিরোমনি বাজার জামে মসজিদের পূর্ব পাশের চত্বরে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবর রহমান।
জানাজা শেষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও খেলাফত মজলিসের হাজার হাজার নেতাকর্মী, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি ও অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন চোখের পানি ফেলে চির বিদায় দেন ‘ভালো মানুষ’ হিসাবে পরিচিত মিয়া আব্দুল হামিদকে।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শিরোমনি হাফিজিয়া মাদরাসায় পিতা হাজী গোলাম নবী মিয়ার কবরের পাশে তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হন।
সোমবার বাদ মাগরিব ঢাকার ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন কারাবন্দি প্যারোলে মুক্তি পাওয়া তার জ্যেষ্ঠ পুত্র অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এরপর তার কফিন ঢাকা থেকে খুলনায় রওনা দেয়। রাত ৩টার দিকে তার কফিনবাহী এ্যাম্বুলেন্সটি শিরোমনির নিজ বাসভবনে এসে পৌছায়। মঙ্গলবার ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে এক নজর দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় করেন।
সকাল ১১টার দিকে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের প্রতিনিধিদল মরহুমের বাড়িতে পৌছান। এ সময় কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, খুলনা মহানগরীর আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভুইয়া, ঢাকা উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশীদ খান শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করেন ও সার্বিক খোজ খবর নেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগরী নায়েবে আমীর মাস্টার শফিকুল আলম, যশোর শহর শাখার আমীর গোলাম রসুল, ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন, উত্তর জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি লস্কর তাসলিম আলম, শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, জামায়াত নেতা মুন্সি মঈনুল ইসলাম প্রমুখ।
পরে মরহুমের কফিন শিরোমনি বাজার মসজিদের পূর্ব পাশের চত্বরে নেয়া হয়। তার আগেই চত্বর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দেড়টার পরে মরহুমের মেঝ পুত্র অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও ছোট ছেলে মিয়া মুজাহিদুল ইসলামের পরিচালনায় জানাজা পূর্বে উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয নায়েবে আমীর মাওলানা শাখাওয়াত হোসাইন, খুলনা মহানগরীর আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদসহ আরো অনেকে।
এ সময় নেতৃবৃন্দ মরহুম আব্দুল হামিদ মিয়ার জীবনের সকল নেক আমল আল্লাহ তায়ালা কবুল করে তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করার তৌফিক কামনা করেন। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী কাক ভেজা হয়ে পিনপতন নীরবতা পালন করে নেতাদের বক্তব্য শোনেন।
এরপর মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবর রহমান। জানাজায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুবদল, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার মুসল্লী অংশ গ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে কফিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শিরোমনি হাফিজিয়া মাদরাসায় নেয়া হয়। সেখানে নির্ধারিত স্থানে মরহুমের পিতা হাজী গোলাম নবী মিয়ার কবরের পাশে তাকে চির নিন্দ্রায় শায়িত করা হয়।
উল্লেখ্য, মিয়া আব্দুল হামিদ (৯০) ঢাকার কল্যাণপুর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ অক্টোবর রোববার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ইন্তিকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্ন ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলে, ৫ মেয়ে, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মিয়া আব্দুল হামিদ মাসাধিকাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কল্যাণপুর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০১৪ সালে তার হার্টের বাইপাস সার্জারি হয়। ২০১৬ সালে ফুসফুস ইনফেকশন হয়। ২০২০ সালে তার প্রস্টেস্ট অপারেশন করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে তার সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে ছিলেন। সবশেষ ৯ অক্টোবর অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তারের পরামর্শে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই