খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বর্তমান স্থাপনার প্রতিষ্ঠাতা দক্ষিণ বাংলার নারী জাগরণের আলোকবর্তিকা আনোয়ারা বেগম রানু আপা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে অনেকখানী অপরিচিত তিনি। আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী এ মহীয়সী নারীর; ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। খুলনা অঞ্চলের নারী শিক্ষার অন্যতম এই পথিকৃত প্রবীণদের কাছে রানু আপা সম্বোধনে খ্যাত। দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর বিদেহীয় আত্মার মাগফেরাত কামনা ও অতল শ্রদ্ধা প্রিয় রানু আপার প্রতি।
১৯৩১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর পিতার কর্মস্থল পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। খুলনার খালিশপুরের চরেরহাটে তাঁর পিতৃপুরুষের বাসস্থান। বদ্ধ গৃহকোণে বন্দী নারী সমাজের মুক্তি, শিক্ষা ছাড়া কোন পথ নাই- এই ভাবনা কৈশোরেই তিনি অনুভব করেছিলেন। বহু প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে নিজে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন। খুলনা পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান রায় বাহাদুর মহেন্দ্র কুমার ঘোষ প্রতিষ্ঠিত আহসান আহমেদ রোডে অবস্থিত আর. কে. গার্লস কলেজ (বর্তমান খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ) থেকে আই.এ., বি.এ. পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. ডিগ্রি অর্জনের আগেই গার্লস কলেজের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা, অগাধ জ্ঞান ও নিরলস আত্মনিবেদনের ফলে অচিরেই কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। কঠোর পরিশ্রম, ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও বলিষ্ঠ প্রশাসনিক দক্ষতায় তিনি বর্তমান কলেজটি নির্মাণ করেন। অতি অল্পসময়ের মধ্যেই কলেজটিকে শিক্ষার দিক থেকে অত্যন্ত উচ্চমানের জাতীয়পর্যায়ের কলেজ হিসাবে উন্নীত করতে সক্ষম হন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আনোয়ারা বেগম সেই অন্ধকারচ্ছন্ন যুগে নারী শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে তাঁর অমর সৃষ্টি খুলনা মহিলা কলেজটি স্থাপনের মধ্যদিয়ে অমর হয়ে রয়েছেন। খুলনায় সার্বিক জ্ঞান-সাধনার জন্য কলেজে দুই একর জমি পার্শ্ববর্তী গণগ্রন্থাগারের জন্য তিনি ছেড়ে দেন। খুলনা থেকে তার স্বামীর বদলিজনিত কারণে তিনি ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে খুলনা ছেড়ে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ফলে খুলনার বর্তমান যুগের মানুষের কাছে তিনি প্রায় অপরিচিত। ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় তাঁর পুত্রের বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ এবং সভাপতি, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।
খুলনা গেজেট/এআইএন