খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা মোড় হতে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত (৪ কিঃ মিঃ) ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য সড়কের উভয় পার্শ্বের বৈদ্যুতিক পোল অপসারণে ধীরগতির কারণে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে অতি গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে যানবাহন এবং পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সওজের একটি সূত্রে জানায়, প্রকল্পটির আওতায় সড়কের দুই পাশের বিদ্যুতের পোল স্থানান্তরের জন্য সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে খুলনা ওজোপাডিকো’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- ৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে চাহিদাপত্র চাওয়া হয়। সেই চিঠির সূত্র ধরে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- ৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রাক্কলন ব্যয় প্রথমে ৯৭ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩১ টাকা প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে জমা দেন। যার স্বারক নং ২৭.২২.৪৭৮৫.১০৪.৫৪. ০০১.১৭ তাং ০৩/০৫/২০১৯। কাজটির ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) প্রাক্কলন অনুমোদন পরবর্তী টেন্ডার আহবান করে ওজোপাডিকো লিঃ বৈদ্যুতিক পোল স্থানান্তরের কাজ শুরু করে। কিন্ত এর কিছুদিন পর তাঁদের দপ্তর থেকে প্রাক্কলন ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে ২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৩১৪ টাকার সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয় জমা দেয়। সর্বশেষ খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে বৈদ্যুতিক পোল অপসারণের হালনাগাদ প্রাক্কলন চাওয়া হলে তাঁর দপ্তর থেকে ৪ কোটি ৬১ লক্ষ ৯ হাজার ৮৭ টাকার প্রাক্কলন জমা দেয়া হয়। যার স্বারক নং ২৭.২২.৪৭৮৫.১০৪.৫২.০০১.২০২১-৮৮৬ তাং ২২/০২/২০২১।
একই দপ্তর হতে প্রাক্কলন ব্যয় কি কারণে দফায় দফায় বৃদ্ধি করা হলো, যার যুক্তিসঙ্গত কারণ সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং এজন্য প্রাক্কলনের মূল্য বৃদ্ধির যুক্তিসংগত কারণ জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ২৯ এপ্রিল ২০২১ খ্রিঃ ওজোপাডিকো’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে প্রেরণ করেন।
এর প্রেক্ষিতে গত ২৬ আগষ্ট ওজোপাডিকো’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়, তৎকালীন সময়ে (০৩/০৫/২০১৭) রাস্তার এক পার্শ্বে গল্লামারি টু সিটি সেন্ট্রাল টু সিটি মেইন লাইন বিদ্যমান ছিলো। প্রধানমন্ত্রীর শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০ সালে সেন্ট্রাল টু সিটি মেইন ৩৩/১১/০.৪ কেভি লাইন সড়কের বিপরীত পার্শ্বে ময়লাপোতা টু গল্লামারী পর্যন্ত নতুন লাইন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে খুলনা সওজ এবং ওজোপাডিকো’র দুই নির্বাহী প্রকৌশলী যৌথ সরেজমিনে পরিদর্শন করে ওই রাস্তার দুই পার্শ্বের পোলসহ লাইন হতে ৬ ফুট থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত স্থানান্তরের প্রস্তাব করেন। যার প্রেক্ষিতে ‘২০২০ সালের কাজের পরিধি অনুসারে ২০১৪ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের’ রেট সিডিউল মোতাবেক ৪ কোটি ৬১ লাখ ৯ হাজার ৮৭ টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়। ২০১৭ সালের প্রাক্কলিত মূল্য এবং ২০২০ সালের প্রাক্কলিত মূল্যের মধ্যে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ কেটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার ২৫৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৯ হাজার ৮৭ টাকায় উন্নীত হয় বলে ওই পত্রে জানানো হয়।
ইতিমধ্যে খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে চেকের মাধ্যমে উল্লেখিত কাজের অনুকূলে ৯৭ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩১ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ৩ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার ২৫৬ টাকা ডিপিপি সংশোধন পূর্বক পরিশোধ করা হবে বলে খুলনা গেজেটকে জানিয়েছেন সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ।
এদিকে ৪ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ময়লাপোতার মোড় থেকে জোহরা খাতুন শিশু নিকেতন পর্যন্ত রাস্তার দুই পার্শ্বের বিদ্যুতের পোল অপসারণ না করার কারণে এ প্রকল্পের ২০০ মিটার রাস্তার রিকনস্ট্রাকশন কাটিং বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছর এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ৪ লেনে উন্নীতকরণ এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বিপুল সংখ্যক যানবাহন এবং পথচারীদের দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, গত ৩ জুন ২০২১ থেকে মেসার্স তিতাস ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওজোপাডিকো নগরীর ময়লাপোতা মোড় হতে জিরো পয়েন্ট ৪ কিঃমিঃ সড়কের উভয় পার্শ্বের বৈদ্যুতিক পোল অপসারণের কার্যাদেশ প্রদান করেছে।
মাত্র ৪ কিঃমিঃ সড়কটির চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে খুলনা গেজেটকে জানিয়েছেন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সওজ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী এইচ এম শোয়েব হোসেন। তিনি বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বাকি ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যে ৪ কিঃমিঃ সড়কের সম্পূর্ণ সাব বেজ সম্পন্ন হয়েছে। বেজ টাইপ-২ এর কাজ চলমান আছে। বেজ টাইপ-২ এর কাজ সম্পন্ন হলে বেজ টাইপ-১ এর কাজ শুরু হবে। চায়নার তৈরি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব রেডিমিক্স প্লান্ট, বেসিং প্লান্ট মেশিন, পেপার মেশিং দিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ মহাসড়কের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি’র) অর্থায়নে ১০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ডিপিপি অনুয়ায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির চুক্তি মেয়াদ ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। শুধু (৪কি মিঃ) ৪ লেনে মহাসড়ক উন্নীতকরণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাকি টাকা ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে। আতাউর রহমান খান লিঃ এবং মাহবুব ব্রাদার্স (প্রাঃ) লিঃ জেভি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির কাজ করছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক এর মাসিক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান এবং মাহাবুব ব্রাদার্স (প্রাঃ) লিমিটেডকে প্রকল্পটির কাজ সম্পাদনের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম