পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভাল থাকলেও কাবুলে নয়া সরকার গড়ার আগে চিনকেই ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী’র তকমা দিল তালিবান। সেই সঙ্গে শুক্রবার তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদ জানিয়ে দিয়েছেন, চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’কর্মসূচিকেও সমর্থন করবেন তাঁরা।
কিন্তু কেন চিনের প্রতি তালিবানের এমন সহৃদয় মনোভাব? ইটালির একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জবিউল্লার মন্তব্য, ‘‘আমাদের দেশে নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে চিন।” তিনি জানান, ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’কর্মসূচির মাধ্যমে চিন বন্দর, রেলপথ, রাস্তা এবং শিল্পতালুকের বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এশিয়া মহাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাকে আফ্রিকা এবং ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে আফগানিস্তানের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের কাজ দ্রুত হবে।
শি চিনফিং সরকারের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর’ (সিপিইসি) নিয়ে ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এই সড়ক ভারতের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করছে বলে নয়াদিল্লির অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের নয়া শাসকদের ‘অবস্থান’ ভারতের অস্বস্তি বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের দাবি, আফগানিস্তানের তামা, লিথিয়াম, রুপো, নিকেলের ভাণ্ডারের দিকে ‘নজর’ রয়েছে চিনের। কাবুলে তালিবান-রাজ কায়েম হওয়ার পরেই সে দেশে খনিশিল্পে বিনিয়োগের জন্য সক্রিয় হয়েছে বেজিং। জবিউল্লার বক্তব্যেও ‘বিপুল চিনা বিনিয়োগের’ আঁচ মিলেছে।
প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহেই চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন তাঁরা মনে করেন, সব দেশের তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ‘পথ দেখানো’ উচিত।
এদিকে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার-বিরোধী নেতাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ভারতের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন হিজেব-ই-ইসলামি গেরিলা গোষ্ঠীর প্রধান গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার। তালিবান সরকারে অংশ না নিলেও তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে আগেই বার্তা দিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। নয়া তালিবানি শাসনের বিরুদ্ধে ভারত যদি কোনও ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে’সামিল হয়, তবে তা নয়াদিল্লির পক্ষে মোটেই সুখকর হবে না বলে এ বার হুঁশিয়ারি দিলেন হেকমতিয়ার।
তালিবরা কাবুল দখল করার পর প্রাণ বাঁচাতে বহু আফগান সাংসদ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘পরবর্তী আফগান সরকার বিরোধী নেতাদের ভারত যদি রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় এবং সেই সব নেতা যদি ভারতের মাটিকে থেকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, তবে তালিবানও কিন্তু পাল্টা জবাব দেবে।”
তালিবানি শাসনে ভারত ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত আর আমেরিকার আগ্রাসনকে ভারত বরাবর সমর্থন করে এসেছে। এই কাবুল-নীতি এ বার বদলানো উচিত ভারতের। দীর্ঘ চার দশকের এই ভুল শুধরে গোটা পরিস্থিতি নতুন করে বিবেচনা করুক নয়াদিল্লি।”
খুলনা গেজেট/কেএম