ঐতিহ্যের ভার বহন করা এক পত্রিকায় একবার সপ্তাহব্যাপী প্রকাশিত সব রিপোর্টের রিভিউ করার দায়িত্ব পেলাম। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ১২-১৫টির মতো বিশেষ রিপোর্ট (বাইনেম) নজরে আসে। তবে হতবাক হয়ে দেখলাম, সব রিপোর্টই হয় ফলোআপ নয়তো পুনরাবৃত্তিদুষ্ট। দু’একটি বাক্যে নতুন/আপডেট তথ্য ছাড়া বাকি সবই পূর্বপ্রকাশিত। এক্সক্লুসিভ হিসেবে দু’একটিকে বিবেচনা করতে গিয়ে দেখলাম সেগুলোও ‘অখ্যাত’ অনলাইন/পত্রিকার কাটপেস্ট। গুগল সার্চইঞ্জিন মুহূর্তেই সব প্রমাণ হাজির করলো।
আর সংবাদ লেখার স্টাইলও মুখস্থ। প্রথমে ইন্ট্রো, তারপর ইন্ট্রোর ভাবসম্প্রসারণ। এরপর কর্তৃপক্ষ বা বিশেষজ্ঞ মতামত। কেউ আবার ইন্ট্রোর পরেই ‘জানতে চাইলে তিনি বলেন’, ‘তিনি আরো বলেন’, ‘তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন’, ‘ঘটনার কারণ সম্পর্কে বলেন’,- এভাবে ‘বলেন বলেন’ করেই রিপোর্টের ইতি টেনেছেন। আইডিয়া বা বিষয়গুলোও বহুলচর্চিত। নতুন অনুসন্ধানের ইঙ্গিত পর্যন্ত নেই।
রিভিউ শেষে শ্রেণিবিন্যাস করতে গিয়ে মনে হলো, আর যাই হোক, রিপোর্টগুলোকে নিরস, ফেলনা বলা যায় না। অন্যের রিপোর্টের প্রতি যে পরিমাণ প্রেম আর স্পর্শের অনুভূতি, তাতে আদর করে ‘রোমান্টিক নিউজ’ নামকরণ না করলে রিপোর্টারের প্রতি অবিচার করা হবে! এতো গেল পত্রিকা। অনলাইন তো আরো একধাপ এগিয়ে।
এক অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে হলো ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। দেখলাম, শীর্ষ সংবাদব্যবস্থাপক মহোদয় নিজে ঐতিহ্যবাহী এক নিউজপোর্টাল আর শীর্ষ স্থানীয় দুটি পত্রিকার অনলাইনের নিউজ লিংক বিরামহীনভাবে সাজেস্ট করে যাচ্ছেন। নিউজরুমে সেগুলো পটাপট আপলোড হচ্ছে। একেক নিউজরুম এডিটরকে ৩০-৪০টা করে নিউজ আপলোডের টার্গেট দেয়া হয়েছে। তারা বিদ্যুৎ গতিতে আপলোড করে যাচ্ছে। কেন যেন মনে হলো, যে অন্যের করা যেসব নিউজ এত আবেদন সৃষ্টি করতে পারে তাদের ‘আবেদনময়ী নিউজ’ না বলে উপায় আছে?…
(লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে)
খুলনা গেজেট /এমএম