ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষে যাত্রীবোঝাই নৌকাডুবির ঘটনায় ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন। এখনও নিখোঁজ অন্তত ৩৯ যাত্রী। এদিকে যাত্রীবোঝাই ট্রলারডুবির ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভেসে আসে ১০ থেকে ১২ বছরের একটি মেয়ে শিশুর মরদেহ। উদ্ধারকর্মীরা পৌনে ১০টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে। শিশুটির পরিচয় এখনও নিশ্চিত করেনি পুলিশ। তার মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজল বেগম (৪০), দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেরকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮), চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার শিশু কন্যা তাকুয়া (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭) ও ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮)।
আরও রয়েছেন, বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৭) ও তার মেয়ে মুন্নি (১০), আব্দুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৫২), নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০) ও পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৪৫)।
রাত ১১টা র্পন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে ১৫ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহের সঙ্গে দাফনের জন্য স্বজনদের হাতে ২০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাস্ত বৈদ্য জানান, সুরতহাল করার পর শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। প্রত্যেক পরিবারকে দাফন বাবদ নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজয়নগর উপজেলার চরইসলামপুর থেকে তাদের আটক করে স্থানীয় জনতা। তারা হলেন, জেলার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের ষোলাবাড়ি এলাকার আবজল মিয়ার ছেলে জামির মিয়া (৩৫), কাশেম মিয়ার ছেলে মো. খোকন (২২) ও মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মো. রাসেল (১৮)। এদের মধ্যে জামির বালুবোঝাই ট্রলারের চালক। বাকি দুজন তার সহযোগী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা জানান, ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বালুবোঝাই ট্রলারের চালকসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
নৌকাডুবির ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনকে প্রধান করে গঠন করা ওই কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইসকা বিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৪০ জনেরও বেশি যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
ডুবে যাওয়া নৌকার যাত্রী আলী আক্তার রিজভী বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি সদর উপজেলার আনন্দবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে লইসকা বিল এলাকায় বিপরীত দিকে থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়।
খুলনা গেজেট/এনএম