সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাহায্য চাইতে আসা এক প্রতিবন্ধী শিশু ও তার মা-বাবাকে প্রকাশ্যে মারপিট ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিকার দাবি করে মারপিটের শিকার প্রতিবন্ধী শিশুর মা ফারজানা খাতুন বাদী হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের আরার গ্রামের আল মামুনের আড়াই বছর বয়সী ছেলে প্রতিবন্ধী আশরাফুল আলম বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। করোনা কালীন সময়ে কাজ কর্ম না থাকায় ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে তারা হিমশিম খাওয়ার পাশাপাশি খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে দিন কাটছিল তাদের। সাহায্যের আবেদন জানিয়ে অনেকবার কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত হারুন চৌধুরীর কাছে গেলেও তাদেরকে কোন সহযোগিতা করা হয়নি। গত ঈদের সময় সরকারিভাবে ৫০০ টাকা দেওয়া ছাড়া চেয়ারম্যান তাদেরকে কোন সহযোগিতা বা ত্রাণ দেয়নি। সাহায্যের জন্য অনেকবার কাকুতি মিনতি করার পর চেয়ারম্যান তাদেরকে পরিষদে যেতে বলেন। প্রতিবন্ধি ছেলেকে ১০দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর সোমবার সকালে তারা বাড়ি ফেরেন।
পথিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের কাছে পৌছে অফিস খোলা দেখে আশরাফুল আলম তার স্ত্রী ফারজানা খাতুন ও শিশু প্রতিবন্ধি ছেলেকে নিয়ে কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে যান। ভিতরে ঢুকে ‘বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে আছি, আমাদের কিছু ব্যবস্থা করেন’ এমন কথা বলার সাথে সাথে চেয়ারম্যান চৌকিদার দিয়ে ঘর থেকে তাদেরকে বের করে দিতে হুঙ্কার দেন। এরপর চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত হারুন চৌধুরী নিজেই চেয়ার থেকে উঠে এসে বাচ্চা কোলে পিতা মামুনকে মারপিট করেন। এসময় স্ত্রী ফারজানা বাচ্চাকে ঠেকাতে গেলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি এসময় বলতে থাকেন, ‘তোরা অন্য দল করিস, কোন সহযোগিতা পাবিনে, ‘কোথাও যেয়ে কিছু করার থাকলে করে নিস’ বলে দুর দুর করে তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এসময় চেয়ারম্যান মুখ খিস্তি করে অকথ্য ভাষায় তাদেরকে গালিগালাজ করতে থাকেন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত লোকজন হতবাক হয়ে পড়েন।
এ ঘটনার পর প্রতিবন্ধী শিশুর মা ফারজানা খাতুন বাদী প্রতিকার প্রার্থনা করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, আশাশুনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলা প্রশাসক মু. হুমায়ুন কবির অভিযোগ পাওয়া মাত্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত হারুন চৌধুরী জানান, শিশুটিকে নিয়ে তাকে চলে যেতে বললেও সে যায়নি, তখন বাধ্য হয়ে তাদেরকে বকাবকি করা হয়েছে। এটা আমার পরিষদের ভিতরের ব্যাপার, এতে সাংবাদিকদের লেখালেখির কি আছে।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কবির প্রতিবন্ধী শিশুর মা ফারজানা খাতুনের দেয়া একটি অভিযোগ মঙ্গলবার (২৪ আগষ্ট) সকালে প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি যদি স্থানীয়ভাবে ফয়সালা করা না হয় তাহলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম