কয়েক দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো উন্মোচন করা হবে বলে জানিয়েছে তালেবান। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তালেবান বিদ্রোহীরা দক্ষিণ এশীয় দেশ আফগানিস্তান দ্রুত দখলে নেওয়ার পর আজ শনিবার ইসলামপন্থি আন্দোলনটির একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানান। তালেবানের মুখপাত্র রয়টার্সকে আরও বলেন, ‘তালেবানের আইনি, ধর্মীয় ও পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞেরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি নতুন শাসন কাঠামো উপস্থাপনের জন্য কাজ করছেন।’
তালেবান বিদ্রোহীরা বজ্রগতিতে গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর থেকেই নিজেদের মধ্যপন্থি হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে আসছে। যদিও ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পেছনে দায়ী আল কায়েদা জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কঠোর হাতে আফগানিস্তান শাসন করেছিল তালেবান।
এদিকে তালেবানের আফগানিস্তান দ্রুত দখল এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম লড়াই বন্ধে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে যে রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজের অবস্থানে অটল রয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এমনটি বলা হয়েছে।
শুক্রবার বাইডেন দাবি করেন, আমেরিকান পাসপোর্টধারীদের কাবুল বিমানবন্দরে আসতে বাধা দিচ্ছে না তালেবান। তবে তিনি এও স্বীকার করেন, প্রত্যাহার কার্যক্রম একেবারে প্রাণহানির ঝুঁকিমুক্ত নয়।
যদিও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বক্তব্যের উল্টো তথ্য দিয়ে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, কাবুল বিমানবন্দরগামী মার্কিন সেনাদের পিটিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা।
কাবুল থেকে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রমে মার্কিনিদের ‘অগ্রাধিকার’ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বাইডেন বলেন, ‘৫০ থেকে ৬৫ হাজার আফগান সহযোগী দেশ ছাড়তে চায়, তাদেরও আনতে হবে। এতে কোনো ভুল নেই, যে এই ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম বিপজ্জনক অবস্থায় করতে হচ্ছে। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সামরিক বাহিনীর লোকেরা কাজ করছেন। যুদ্ধে সহযোগিতাকারী আফগানদেরসহ প্রত্যেক মার্কিনিকে আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা হবে।’
বাইডেন জানান, মার্কিন সামরিক বাহিনী ১৬৯ জন মার্কিনিকে নিয়ে আসতে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরেও হেলিকপ্টার পাঠিয়েছিল।
জো বাইডেন বলেন, ‘প্রাণহানির ঝুঁকি একেবারেই থাকবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে আমি এতটুকু বলতে পারি, সবাইকে নিরাপদে ফেরাতে আমাদের যত শক্তি আছে, সবই প্রয়োগ করা হবে।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এপ্রিলে সেনা প্রত্যাহারের যে ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন, তাতে সামরিক বাহিনীর প্রস্থান ছিল তাঁর কথায় একটি ‘সহজ বিকল্প’ এবং এ ছাড়া কার্যকরভাবে করার কিছুই ছিল না।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোর দিয়ে বলেন, তালেবানের এত দ্রুত ক্ষমতা দখল কেউ আশা করেনি, সে সম্ভাবনার কথা তিনি প্রত্যাহার কর্মসূচির ঘোষণার সময় থেকেই বারবার নাকচ করে আসছিলেন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আরও বলেন, ‘তিন লাখ আফগান সেনা, যাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং অস্ত্রে সজ্জিত করেছি, তারা হঠাৎ করে হার মানতে পারে বা হাল ছেড়ে দিতে পারে, আমার মনে হয় না, এমনটি কেউ ভেবেছে।’
এ সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও আফগান সহযোগীদের সুশৃঙ্খলভাবে উদ্ধারে ব্যর্থতা এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আফগান সরকারের দ্রুত পতনের ফলে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম