লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদসহ বাগেরহাটের বিনোদন কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকালে জেলার সকল বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও বাগেরহাট যাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় দুপুর দুইটায়। এদিকে সুন্দরবনে এখনও দর্শনার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। কবে নাগাদ সুন্দরবনে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবে সে বিষয়েও বিস্তারিত জানানো হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে ষাটগম্বুজ মসজিদ কমপ্লেক্স ও বাগেরহাট যাদুঘরে দর্শনার্থীদের আনাগেনা দেখা যায়। দীর্ঘদিন পরে মুসলিম স্থাপত্যের এই প্রাচীন নিদর্শন দেখতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা।
মাগুরা থেকে ষাটগম্বুজে আসা শিক্ষার্থী মোঃ রাকিব হোসেন ও সামিউল আলিম বলেন, জরুরী কাজে বাগেরহাটে আসছিলাম। কাজ শেষে জানতে পারলাম ষাটগম্বুজ মসজিদ খোলা। তাই সুযোগটা কাজে লাগালাম। ষাটগম্বুজ মসজিদ ও বাগেরহাট যাদুঘর ঘুরে অনেক ভাল লেগেছে।
খুলনা থেকে আসা তাফসির কবির খান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ যে বন্ধ সে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দুপুর একটার দিকে আসছি ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে আসছি। এসে শুনি এখনও খোলার কোন নির্দেষনা আসেনি। গেট থেকে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলেন। তারপরে দুইটার পরপর প্রবেশ করেছি। ষাটগম্বুজ ঘুরে অবাক হয়েছি আমি।
বাবা-মায়ের সাথে ঘুরতে আসার মিথিলা আক্তার বলেন, অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল ষাটগম্বুজে আসব। কিন্তু পারিনি। সকালে বাবা বললেন, সব পর্যটনকেন্দ্র খুলেছে, আজকে যাই। পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই পরিবারের সবাই মিলে চলে আসলাম। খুবই ভাল লেগেছে এখানে এসে।
দুপুর দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অন্তত দেড়শতাধিক দর্শনার্থী ষাটগম্বুজ মসজিদে প্রবেশ করেছেন। তবে ষাটগম্বুজ মসজিদ ও খানজাহান আলীর মাজারে দর্শনার্থীদের আধিক্য থাকলেও বাগেরহাট শহরের দশানীস্থ পৌর শিশু পার্ক, বাগেরহাট সদর উপজেলার বারাকপুরের সুন্দরবন রিসোর্ট, চুলকাঠি এলাকার চন্দ্রমহল ছিল দর্শনার্থী শূন্য।
বাগেরহাট শহরের দশানীস্থ পৌর শিশু পার্কের টিকিট বিক্রেতা আসমা আক্তার ডলি বলেন, দীর্ঘদিন পরে সকালে পার্ক খুলেছি, কিন্তু তেমন কোন দর্শনার্থী আসেনি। সারাদিনে ১০-১২ জন লোক এসেছে।
বাগেরহাট যাদুঘরের এ্যাটেন্ডেন্ট আহাদ আলী বলেন, দুপুরে খোলার পর থেকেই দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছে। দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যারা আসছেন, তারাও স্বাস্থ্য বিধি মেনে যাদুঘর ও ষাটগম্বুজ মসজিদ পরিদর্শণ করছেন।
ষাটগম্বুজ মসজিদের সাইড পরিচালক (টিকিট বিক্রেতা) খান আবু তালেব বলেন, উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের নির্দেষনা অনুযায়ী দুপুর দুইটার পরে ষাটগম্বুজ মসজিদ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। দুপুর থেকে ৫ টা পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক দর্শনার্থী ষাটগম্বুজে প্রবেশ করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকলে প্রবেশ করছে। প্রবেশের সময় মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড সেনিটাইজ নিশ্চিত করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
পূর্ব সুন্দরবনের ডিএফও (বিভাগীয় বনকর্মকর্তা) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য কোন আদেশ এখন আসেনি, তাই পর্যটকদের জন্য এটি উন্মুক্ত করা যাচ্ছেনা। উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের নির্দেষনা পেলে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দরবন উন্মুক্ত করব।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকার পর্যটনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। সরকারি ও প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বিকেলে ষাটগম্বুজ মসজিদ কমপ্লেক্স উন্মুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ষাটগম্বুজ মসজিদের গেটে দর্শনার্থীদের জন্য মাস্ক ও হ্যান্ড সেনিটাইজার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি সকল বিনোদন কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিদর্শণ করা হবে। কোন ক্ষেত্রে যদি আইনের ব্যাত্যয় অথবা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়, তাহলে সেসব জায়গায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করার কথাও জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/ টি আই