খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

কলারোয়ায় সাফল্য অর্জনকারী ৫ জয়িতার ইতিকতা

কলারোয়া প্রতিনিধি

অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগেরিতে নির্বাচিত হয়েছেন কলারোয়া উপজেলার বুইতা গ্রামের মোজাম্মেল গাজীর বিধরা কন্যা আলেয়া খাতুন। তিন সন্তানের জননী বসবাসের কোন জাগয়া ছিলনা। স্বামীর মৃত্যুর পর একেবারে অসহায় হয়ে পড়েন। অন্যের বাড়ীরে ও ক্ষেত খামারে কাজ করে জীবন ধারন করতেন। কিছু টাকা জমিয়ে একটি মুদির দোকান দেন এবং উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৮ কাঠা জমি কেনেন। নিজের আয়ের অর্থ দিয়ে দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন এবং ছোট ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। দোকানের পাশাপাশি নিজের জায়গায় একটি পোল্ট্রি ফার্ম করেছেন এবং কুঁড়ে ঘর থেকে পাকা বাড়ীতে বসবাস করছেন। এক সময় তার দিন আনা দিন খাওয়া সংসার ছিল এখন আলেয়া খাতুন অনেক সুখে আছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে পোশাক তেরী ও তাতে বøক এর কাজ করে পোশাক বিক্রয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তার আর্থিক অবস্থা পূর্বের তুলনায় অনেক ভালো। তার অর্জিত পুঁজি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগেরিতে নির্বাচিত হয়েছেন  কলারোয়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেক গাজী কন্যা সানজিদা খাতুন। সানজিদা পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। তার বাবা তাকে পোশাক পরিচ্ছেদ ওপড়ালেখার কোন খরচ যোগাতে পারত না।তিনি অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন। তাই বিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত অবস্থায় টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই উপার্জন করতেন। একদিকে পড়ালেখা অন্য দিকে নিজের রোজগার তাকে খুব কষ্টে ফেলত। তবু সে দমে যায়নি। এসএসসি ফরম পূরণ, এইচএসসিতে ভর্তির টাকা অনেক কষ্টে যোগাড় করতে হয়েছে। একের পর এক সংগ্রাম করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। একজন দরিদ্র দিন মজুরের কন্যা হয়ে অনেক সংগ্রাম করে মাস্টার্স পাশ করে বর্তমানে চাকরী করছে। সে যৌতুক,বাল্যবিবাহ,নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধমূলক কাজ করে যাচ্ছে।

সফল জননী যে নারী ক্যাটাগেরিতে নির্বাচিত হয়েছেন কলারোয়া উপজেলার নাথপুর গ্রামের কুতুবউদ্দীন আহমেদ এর কন্যা নারগিস বেগম। জন্মের পরপরই তার মা পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। মাতৃহীন নারগিস নানা বাড়ীতে অনেক সুবিধা বঞ্চিত হয়ে বড় হন। প্রবল পড়ালেখার ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত যেতে পেরেছিলেন। তারপর তার বিয়ে হয়ে যায়। অপূরনীয় আপসোস থেকে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ৭ সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। ২ পুত্রের মধ্যে একজন জনতা ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার অন্যজন মেডিকেল অফিসার। ৫ কন্যার মধ্যে ৩ জন কলেজের প্রভাষক, ১জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ও ১জন আদর্শ গৃহিনী। নারগিস বেগম তার সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পেরে নিজের জীবনকে সার্থক মনে করেন। কলারোয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল মজিদ তার ছায়াসঙ্গী হিসেবে সারা জীবন উৎসাহ যুগিয়েছেন।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী ক্যাটাগেরিতে নির্বাচিত হয়েছেন কলারোয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের সিমসন বিশ্বাসের কন্যা সীমা বিশ্বাস। অনেক কম বয়সে বিয়ে হয় এবং ২টি সন্তান হওয়ার পর স্বামী তার উপর অত্যাচার শুরু করে। তার অমানুষিক নির্যাতনে আমি হতবিহŸল হয়ে পড়ি। সন্তান দুটির কারণে আতœহত্যার পথ থেকে ফিরে আসি। বাবার বাড়ী ফিরে যাব কিন্তু বাবা গরীব। অবশেষে নির্যাতন সইতে না পেরে তালাক হয়ে যায়। সন্তান দুটি নিয়ে ভাইয়ের ঘরের পাশে চাল দিয়ে বসবাস করতে থাকেন। কিছু দিন পর তার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর আমি আরও অসহায় হয়ে পড়ি। এরপর সীমা মিশনে একটি চাকরি খুঁজে পান। বর্তমানে ব্র্যাক অফিসে ক্লিনার পদে নিযুক্ত আছেন এবং বাচ্চাদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করতে চান।

সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী ক্যাটাগেরিতে নির্বাচিত হয়েছেন কলারোয়া উপজেলার উত্তর দিগং গ্রামের আবুল হোসেনের কন্যা মমতাজ বেগম। এলাকার বিভিন্ন মহিলারা মানুষিক নির্যাতন, অত্যাচার, সংসারের অচ্ছলতা,বাল্যবিবাহ,যৌতুকের শিকার হন। এসব মহিলাদের সমস্যা নিরসনের লক্ষে কিছু মহিলাকে একত্রিত করে সমিতির কাজ শুরু করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সঞ্চয় জমা ও ঋণ বিতরণ শুরু করেন। এর পাশাপাশি মৎস্য,কৃষি, হাঁস-মুরগি পালন, দর্জি প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে। সাফল্য দেখে বর্তমানে অনেক মহিলা তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে। এলাকায় যৌতুক, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ভূমিকা রেখেছেন। গরীব অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা ও চিকিৎসার খরচ দিয়েছেন।

খুলনা গেজেট/  টি আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!