চাকরিজীবী লীগের সভাপতি হিসেবে নাম আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে। উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক অবদান না থাকার পরেও আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে তিনি কীভাবে অন্তর্ভূক্ত হলেন, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
হেলেনার আওয়ামী লীগের আসা নিয়ে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য আওয়ামী লীগ নেতারা না দিলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের হাত ধরে দলটির উপকমিটিতে পদ পান তিনি।
অবশ্য ব্যবসা করার সুবাদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতার সঙ্গেই সুসম্পর্ক ছিল হেলেনার। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সাথে তার ছবি ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নারী উদ্যোক্তা হওয়ার সুবাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কয়েকটি বিদেশ সফরে সফরসঙ্গীও হয়েছিলেন তিনি।
উপকমিটিতে পদ হারানোর পর গত ২৪ জুলাই নিজের মালিকানাধীন আইপি টিভি ‘জয়যাত্রা টেলিভিশনে’ হেলেনা নিজের পক্ষ সমর্থনে দেয়া এক বক্তব্যে তার পরামর্শদাতা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কথা তুলে ধরেন।
সম্প্রতি নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠন। এটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নাম আসে হেলেনা জাহাঙ্গীরের। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাহবুব মনিরকে। তাদের নাম-সংবলিত পোস্টারে ছেয়ে যায় ফেসবুক।
পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সংগঠনটির দাবি, দুই-তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরের দিনই হেলেনাকে দলের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। আর তাকে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ থেকে আরও আগেই বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
শনিবার রাতে হেলেনার গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অবৈধ পন্থা, অপকৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
হেলেনা জাহাঙ্গীর কীভাবে আওয়ামী লীগে এলেন, জানতে চাইলে দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘আসলে উনি (হেলেনা) তো কুমিল্লা আওয়ামী লীগের সদস্য। আওয়ামী পরিবারের হিসেবেই আমি জানি। ওনার জয়যাত্রা টিভি নামে একটা মিডিয়া আছে, যেটার সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী (আ ক ম মোজাম্মেল) মহোদয়ও আছেন।
‘তিনি (আ ক ম মোজাম্মেল) আমাদের জেলা (গাজীপুর) আওয়ামী লীগের সভাপতি। যা হোক, ওনার (আ ক ম মোজাম্মেল) সাথে ভালোই জানাশোনা, সে হিসেবে ওনাকে (হেলেনা) উপকমিটিতে আমরা রেখেছিলাম।’
হেলেনা জাহাঙ্গীরের সাথে জানাশোনা ছিল জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আমাকে ফোন করেছিলেন, উনি (হেলেনা) যখন তার কাছে ঘোরাঘুরি করছে তখন, আমি হেলেনা জাহাঙ্গীরকে চিনি কিনা এটা জানতে। আমি বলেছি, তাকে আমি চিনি, নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তাকে আমি চিনি। আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমি ভালো বলেছি।’
হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনে কীভাবে যুক্ত হলেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘উনি (হেলেনা) চিঠি দিয়ে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, এটার উপদেষ্টা হতে। এখন তিনি যদি কোনো অপরাধ করেন… ধরেন আপনি আমার পরিচিত, ভালো সম্পর্ক, এখন আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনো দোষ করেন, সেটা আপনার ব্যাপার। আমার সাথে পরিচয় আছে, জানাশোনাও আছে। এটা তো অনেকের সাথেই আছে।
‘তিনি একজন বড় ব্যবসায়ী, প্রধানমন্ত্রীর বেশ কয়েকটি বিদেশ সফরে সঙ্গীও হয়েছেন। আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, প্রায় ৩ বছর আগে অনুরোধ করেছিলেন (জয়যাত্রা টিভির) প্রধান উপদেষ্টা হতে। আমি বলেছিলাম, আগে আপনাদের এটা পারমিশন হোক, আমি লাগলে হেল্প করব।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ সাংবাদিকেদের বলেন, ‘ফাঁকফোকর দিয়ে দলের উপকমিটিতে এ ধরনের কারো ঢোকা সমীচীন হয়নি। এদের কমিটিতে রাখার বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল।
‘যারা সুপারিশ করেছেন, তাদেরও আরও জানাশোনার দরকার ছিল। তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’, যোগ করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/ টি আই