গত তিন দিন ধরে নিম্নমূখী প্রবণতার পর মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে ফের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হিসেবে। সোমবার থেকে মঙ্গলবার-২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে এ রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থ হয়ে ওঠাদের হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ১১ হাজার ২৭০ জন এবং মারা গেছেন ৮ হাজার ২৮৪ জন।
আগের দিন সোমবার বিশ্বে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১৭ হাজার ৩৯২ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৬ হাজার ৮৩৯ জনের।
অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৫৩ জন এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৪৪৫ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দৈনিক আক্রান্তের হিসেবে বিশ্বে শীর্ষে ছিল যুক্তরাজ্য এবং মৃত্যুর হিসেবে শীর্ষে ছিল ব্রাজিল।
এছাড়া, গত কয়েক মাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রেও এই দিন সংক্রমণ-মৃত্যু অনেক বেশি ছিল।
দৈনিক সংক্রমণে শীর্ষে থাকা যুক্তরাজ্যে মঙ্গলবার করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ৫৫৮ জন; এবং দেশটিতে এদিন মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের।
দৈনিক মৃত্যুর হিসেবে শীর্ষে থাকা ব্রাজিলে মঙ্গলবার করোনায় মারা গেছেন ১ হাজার ৪২৫ জন এবং এদিন দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম এই দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৮৯৬ জন।
এই হিসেবে ব্রাজিলের পরেই আছে করোনার এশীয় কেন্দ্র (এপিসেন্টার) হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দেশ ইন্দোনেশিয়া। মঙ্গলবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৮০ জনের এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৩২৫ জন।
গত বছর মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক মাস ধরে অনেক কমে এসেছিল সংক্রমণ ও মৃতের হার। কিন্তু সম্প্রতি আবার দেশটিতে বাড়ছে প্রাণঘাতী এ রোগে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দৈনিক সংক্রমণের হিসেবে যুক্তরাজ্যের পরেই অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এই দিন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ২৩২ জন এবং এ রোগে মারা গেছেন ২৫৬ জন।
এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে ভারত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে থাকা ভারতে মঙ্গলবার করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ১২৩ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৮৯ জন।
এছাড়া মঙ্গলবার বিশ্বের আরও যেসব দেশে করোনায় সংক্রমণ-মৃত্যুর উচ্চহার দেখা গেছে সে দেশসমূহ হলো- ইরান (নতুন আক্রান্ত ২৭ হাজার ৪৪৪, মৃত্যু ২৫০), স্পেন (নতুন আক্রান্ত ২৭ হাজার ২৮৬, মৃত্যু ২৯), রাশিয়া (নতুন আক্রান্ত ২৩ হাজার ৭৭০, মৃত্যু ৭৮৪), ফ্রান্স (নতুন আক্রান্ত ১৮ হাজার ১৮১, মৃত্যু ৩৩) ও আর্জেন্টিনা (নতুন আক্রান্ত ১৫ হাজার ৭৭, মৃত্যু ৩৩)।
দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মঙ্গলবার স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বজুড়ে বেড়েছে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা। ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের চার্ট বলছে, মঙ্গলবার বিশ্বে মোট সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৮ জন। সক্রিয় এই রোগীদের মধ্যে করোনার মৃদু উপসর্গ বহন করছেন ১ কোটি ৩১ লাখ ৩ হাজার ৮৩৭ জন এবং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন ৮১ হাজার ৭৮১ জন।
আগের দিন সোমবার বিশ্বে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ ৩১ হাজার ১৫৪ জন।
এদিকে, সংক্রমণ-মৃত্যু বৃদ্ধির জেরে সোমবার থেকে মঙ্গলবার-২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা কমেছে বিশ্বজুড়ে। মঙ্গলবার বিশ্বে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৯ জন। সোমবার এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩২ জন।
২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৯ কোটি ২৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৮ জন এবং মারা গেছেন মোট ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫৬ জন।
এছাড়া, মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট ১৭ কোটি ৪৯ লাখ ৯৬ হাজার ৪ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। পরে সাধারণভাবে এই ভাইরাসটি পরিচিতি পায় নতুন বা নভেল করোনাভাইরাস নামে। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছে উহানেই। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তখন জানানো হয়েছিল, ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।
তারপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যাওয়ায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় অবশেষে ওই বছর ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।