সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নে গুনাকরকাটি ব্রিজের নিচে বেতনা নদীর চরে ফেলে দেওয়া নবজাতকের অবশেষে পরিচয় মিলেছে। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) ভোর রাতের কোন এক সময়ে ব্রিজের উপর থেকে নবজাতকটিকে বেতনা নদীর চরে ফেলে দেয়া হয়। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নবজাতকটিকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে মারা যায় শিশুটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামের কার্ত্তিক চন্দ্র মন্ডলের ছেলে মিরনময় মন্ডলের স্ত্রী দিপিকা মন্ডল (২৫) দীর্ঘ ১১ মাস অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গত সোমবার (১২ জুলাই) অন্ত:সত্ত্বার সময়কাল ১১মাস অতিবাহিত হওয়ায় দিপিকার স্বামী ও পিতাকুলের পরামর্শে বুধহাটা বাজারের জনসেবা ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়। ওই ক্লিনিকের পরিচালকের পরামর্শে ও তত্ত্বাবধানে দিপিকাকে সিজার করা হলে সে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। নবজাতক কন্যা সন্তানটি প্রতিবন্ধী ও দুর্বল হয়েছে বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের জানান। তারা নবজাতকের অভিভাবকদের বাচ্চাটি দ্রুত সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন।
সে অনুযায়ি দিপিকার মাতা উর্মি রানী সরকারসহ উভয় পক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দিপিকার বাবা পার্শবতী খাজরা ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের সন্দিপ সরকার নবজাতক কন্যা শিশুটি নিয়ে ভোর রাতেই মোটরসাইকেল যোগে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পতিমধ্যে তাকে কুল্যা ইউনিয়নে গুনাকরকাটি ব্রিজের নিচে বেতনা নদীর চরে ফেলে দেওয়া হয়। দিপিকা মন্ডলের মা উর্মি রানী সরকার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এতথ্য জানান।
এদিকে স্থানীয় জনতা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন দিপিকা মন্ডল বলেন, আমি একেবারেই অচেতন অবস্থায় থাকায় আমার সন্তান অসুস্থ্য বলে তাকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। আমার নবজাতক সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে এবিষয়ে আমার এখনও কেউ বলেনি।
কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌধুরী বলেন, তিনি আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ মুহম্মদ গোলাম কবিরের সাথে নবজাতকটি হত্যা করা হয়েছে এমন মনে হওয়ায় মামলার জন্য সুপারিশ করেছি। এসময় তিনি (ওসি) যে কাউকে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন।
উল্লেখ্য, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নে গুনাকরকাটি ব্রিজের নিচে বেতনা নদীর চর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃতপ্রায় নবজাতকটিকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ ঘন্টা পর শিশুটি মারা যায়। নবজাতক কন্যা শিশুটি মৃত্যুও পর মুহূর্তে কোন পরিচয় না পাওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান হারুন চৌধুরী সাতক্ষীরা হাসপাতালের মাধ্যমে নবজাতকের ময়না তদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা শেষে গুনাকরকাটি মাজার শরীফ প্রাঙ্গনে নিয়ে আসেন। পরে রাত সাড়ে ১০টায় শিশুটির নাম ‘মা ফতেমা’ রেখে জানাজা শেষে মাজার শরীফ প্রাঙ্গনে দাফন করা হয় বলে জানা গেছে। এঘটনায় সচেতন মহল নবজাতকটি হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে পুলিশ প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই