খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

হজ্ব পালনের সহজ পদ্ধতি (পর্বঃ ০২)

হাফেজ মাও. মুফতি জুবায়ের হাসান

হজ্বে তামাত্তু এর পদ্ধতিঃ-
► মিকাত অতিক্রমের পূর্বে ইহরাম করে মক্কায় গিয়ে প্রথমে রমল ও ইজতিবার সাথে উমরাহ্ এর তাওয়াফ করবে (অর্থাৎ কাবা ঘর কে ০৭ (সাত) বার চক্কর দিবে।)
► তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমকে সামনে রেখে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে ০২ (দুই) রাকাত নামায আদায় করবে।
► অতঃপর জমজমের পানি পান করবে।
► অতঃপর সাফা-মারওয়া সায়ি করবে (সাফা থেকে মারওয়া ০৭ (সাত) বার চলবে তথা সাফা থেকে শুরু করবে এবং মারওয়াতে শেষ করবে।)
► সর্বশেষ মাথা মুন্ডিয়ে কিংবা চুল খাটো করে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে।
► পুণরায় মক্কার নিজ নিজ হোটেল অথবা মসজিদে হারাম থেকে নতুন ইহরাম করে জিলহজ্বের ০৮ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে মিনার দিকে রওয়ানা হবে, মিনায় অবস্থান করে সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায আদায় করবে এবং রাত্রি যাপন করবে।
► জিলহজ্বের ০৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে আরাফার দিকে রওয়ানা হবে। আরাফায় পৌঁছে সম্ভব হলে গোসল করবে, এবং সেখানে যোহর ও আসর এর নামায আদায় করবে।
উল্লেখ্য, সৌদি বাদশাহ কর্তৃক নিযুক্ত ইমামের সাথে মসজিদে নামিরাহ’তে নামায আদায় করলে উভয় নামায যোহরের ওয়াক্তে একত্রে আদায় করবে নচেৎ নিজ নিজ তাবুতে যোহরের ওয়াক্তে যোহর ও আসরের ওয়াক্তে আসর আদায় করবে।

মাসআলা- মসজিদে নামিরাহ এর ইমাম যদি মুকিম হয় তাহলে তিনি পূর্ণ নামায অর্থাৎ চার রাকাত আদায় করবেন, এবং মুক্তাদি মুকিম-মুসাফির নির্বিশেষে সকলেই চার রাকাত আদায় করবে। আর যদি ইমাম মুসাফির হয় তাহলে ইমাম দুই রাকাত আদায় করে সালাম ফিরাবে, এবং মুকিম মুক্তাদিগণ নিজেদের বাকি দুই রাকাত একাকী পূর্ণ করে নিবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৩/১২৭
সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করবে। সেখানে খোলা আকাশের নিচে কেবলামুখী হয়ে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর নিকট দুআ-কান্নাকাটি করবে।
► অতঃপর সূর্যাস্তের পরে মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হবে, এবং সেখানে মাগরিব ও এশার নামায এশার ওয়াক্তে একত্রে আদায় করবে, (এক আযান ও দুই ইকামাত।) মসজিদে মাশআরে হারামের নিকট খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করা মুস্তাহাব। রাত্রি যাপন করে জিলহজ্বের ১০ (দশ) তারিখ সূর্যোদয়ের কিছু পূর্ব পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করবে। তবে ভীড় অথবা অসুস্থতার কারণে মহিলাদের মুজদালিফায় অবস্থান না করার অনুমতি আছে। সেখান থেকেই জামারাতে নিক্ষেপের জন্য কংকর সংগ্রহ করবে।
► অতঃপর মিনায় এসে জামারাতে আকাবা কে পৃথক পৃথক সাত বারে ০৭ (সাত)টি কংকর মারবে। (সূর্যোদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত মুস্তাহাব, দ্বিপ্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জায়েয, সুর্যাস্ত থেকে ১০ তারিখ দিবাগত রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত।)
যদি কেউ এই সময়ের মধ্যে কংকর নিক্ষেপ না করে তাহলে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতে দম ওয়াজিব হবে।
► অতঃপর কুরবানি করবে, তারপর মাথা মুন্ডিয়ে অথবা চুল খাটো করে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে।
► ১০ (দশ) তারিখেই মক্কায় এসে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করবে। এই তাওয়াফে শুধুমাত্র রমল করবে।
বি. দ্র. যদি ১০ তারিখে কুরবানি, মাথা মুন্ডন এবং তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করতে না পারে তাহলে অবশ্যই ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে উক্ত আমলগুলো সম্পন্ন করবে। অন্যথায় দম ওয়াজিব হবে। তাওয়াফে যিয়ারতের পরে সাফা এবং মারওয়া সায়ি করে আবার মিনায় ফিরে যাবে, মিনায় রাত্রি যাপন করবে এবং সেখানে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করবে, ১১ ও ১২ তারিখ জামারাতে উলা, জামারাতে উস্তা এবং জামারাতে আকাবা সবগুলোকেই ০৭ (সাত)টি করে কংকর মারবে। (দ্বিপ্রহরের পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত মুস্তাহাব এবং সুর্যাস্ত থেকে পরদিন সুবহে সাদিক পর্যন্ত জায়েয ওয়াক্ত।) প্রথম দুই জামারাতে কংকর নিক্ষেপের পরে কিবলামুখী হয়ে দুআ করা সুন্নাত, জামারাতে আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পরে কোন দোয়া নেই।

জিহলহজ্বের ১৩ তারিখেও কংকর মারা মুস্তাহাব। আল্লাহর রসুল ﷺ এর আমল এমনই ছিল। সুতরাং সকলেরই উচিত ১৩ তারিখ কংকর মেরে তারপর মক্কায় ফেরা।
উল্লেখ্য, কেউ যদি তার আগে মিনা ত্যাগ করতে চায় তাহলে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই চলে যেতে হবে। কেননা ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করতে না পারলে সূর্যাস্তের পরে মিনা ত্যাগ করা মাকরূহ। তবে এ কারণে দম বা কোন কিছু ওয়াজিব হবে না।
আর মিনায় ১৩ তারিখ সুবহে সাদিক হয়ে গেলে ঐ দিন কংকর মারা ওয়াজিব। কংকর না মেরে চলে যাওয়া না জায়েয, এবং এতে দম ওয়াজিব হবে।
আর ১৩ তারিখ যোহরের পূর্বেও কংকর মারা জায়েয, তবে দ্বিপ্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুস্তাহাব ওয়াক্ত।
► সর্বশেষ যারা মক্কার বাহিরের বাসিন্দা তারা বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করবে। -ফাতাওয়া রহিমিয়্যা ৮/৮১
এভাবে হজ্বের কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।

বি. দ্র. উপরে শুধুমাত্র হজ্বে তামাত্তু এর সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি তুলে ধরা হল। কারণ, এ পদ্ধতিটি আফাকি (হুদুদে হরম ও হিলের অধিবাসী নয় এমন) ব্যক্তিবর্গের জন্য হজ্ব আদায়ের ক্ষেত্রে তুলনামূলক সহজ। তবে কেউ চাইলে হজ্বে কিরান ও ইফরাদও করতে পারে।
তিন প্রকার হজ্বের মধ্যে পার্থক্য হল,
প্রথমত- নিয়তের দিক দিয়ে। ইফরাদকারী ইহরামের সময় শুধুমাত্র হজ্বের নিয়ত করবে, তামাত্তুকারী শুধুমাত্র উমরাহ এর নিয়ত করবে, আর কিরানকারী হজ্ব ও উমরাহ উভয়টির নিয়ত করবে।
দ্বিতীয়ত- ইফরাদ ও কিরানকারী হজ্বের কার্যক্রম পূর্ণ করার আগে ইহরাম থেকে মুক্ত হতে পারেনা, অপরদিকে তামাত্তুকারী উমরাহ্ এর পরে ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
তৃতীয়ত- ইফরাদ ও কিরানকারীর জন্য মক্কায় প্রবেশের পরে তাওয়াফে কুদূম করা সুন্নাত। ইফরাদকারীর জন্য দমে শোকর অর্থাৎ হজ্বের কুরবানি করা ওয়াজিব নয়, বরং মুস্তাহাব।

এক নজরে হজ্বে কিরান এর করণীয়সমূহঃ-
১. একই নিয়তে হজ্ব ও উমরার ইহরাম করা। (ফরজ)
২. তাওয়াফে উমরাহ করা। (ফরজ)
৩. রমল ও ইজতিবা করা। (সুন্নত)
৪. উমরার সায়ি করা। (ওয়াজিব)
৫. তাওয়াফে কুদুম করা। (সুন্নত)
৬. হজ্বের সায়ি। (ওয়াজিব)
৭. মিনায় অবস্থান [৮ জিলহজ্ব যোহর থেকে ৯ জিলহজ্ব ফজর পর্যন্ত] (সুন্নত)
৮. উকুফে আরাফা [৯ জিলহজ্ব দ্বিপ্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।] (ফরজ)
৯. উকুফে মুজদালিফা [১০ জিলহজ্ব] (ওয়াজিব)
১০. জামারাতে আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা [১০ জিলহজ্ব।] (ওয়াজিব)
১১. দমে শোকর তথা কুরবানি করা। (ওয়াজিব)
১২. মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল খাটো করা। (ওয়াজিব)
১৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা। (ফরজ)
১৪. জিলহজ্বের ১১ ও ১২ তারিখ জামারাতে উলা, উস্তা ও আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপে করা। (ওয়াজিব)
১৫. মিনায় রাত্রিযাপন করা। (সুন্নাত)
১৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা। (ওয়াজিব)
নোট- কিরানকারীর জন্য হজ্বের সায়ি তাওয়াফে কুদুমের সাথে আদায় করা মুস্তাহাব। যদি কেউ চায় তাওয়াফে জিয়ারতের পরেও সায়ি আদায় করতে পারে। এক্ষেত্রে তাওয়াফে যিয়ারতে রমল ও ইজতিবা করবে। আর যদি ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যায়, তাহলে শুধুমাত্র রমল করবে।
-গুনইয়াতুন নাসিক ২০৫; আল বাহরুর রায়েক ২/৩৫৯; কিতাবুল মাসাইল ৩/১২৩

এক নজরে হজ্বে ইফরাদ এর করণীয়সমূহঃ-
১. শুধুমাত্র হজ্ব আদায়ের নিয়তে ইহরাম করা। (ফরজ)
২. তাওয়াফে কুদুম করা। (সুন্নত)
৩. মিনায় অবস্থান [৮ জিলহজ্ব যোহর থেকে ৯ জিলহজ্ব ফজর পর্যন্ত] (সুন্নত)
৪. উকুফে আরাফা [৯ জিলহজ্ব দ্বিপ্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।] (ফরজ)
৫. উকুফে মুজদালিফা [১০ জিলহজ্ব] (ওয়াজিব)
৬. জামারাতে আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা [১০ জিলহজ্ব।] (ওয়াজিব)
৭. মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল খাটো করা। (ওয়াজিব)
৮. তাওয়াফে জিয়ারত করা। (ফরজ)
৯. রমল ও ইজতিবা করা। (সুন্নাত)
১০. হজ্বের সায়ি করা। (ওয়াজিব)
১১. জিলহজ্বের ১১ ও ১২ তারিখ জামারাতে উলা, উস্তা ও আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপে করা। (ওয়াজিব)
১২. মিনায় রাত্রিযাপন করা। (সুন্নাত)
১৩. বিদায়ী তাওয়াফ করা। (ওয়াজিব)
নোট- ইফরাদকারীর জন্য তাওয়াফে জিয়ারতের পরে হজ্বের সায়ি করা মুস্তাহাব। যদি কেউ চায় তাওয়াফে কুদুমের পরেও সায়ি করতে পারে। এক্ষেত্রে তাওয়াফে কুদুমে রমল ও ইজতিবা করবে এবং তাওয়াফে জিয়ারতের সময় করবে না। কেননা রমল ও ইজতিবা শুধুমাত্র ঐ তাওয়াফের পরেই মাসনুন যেই তাওয়াফের পর সায়ি করার ইচ্ছা করবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৭; কিতাবুল মাসাইল ৩/১২২
( চলবে ….. )

লেখক : ইমাম ও খতিব (অ.দা.), কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!