খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

মরা গাছে মৃত্যু ঝুঁকি সড়কে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের পাশে লাগানো সহাস্রাধিক রেইনট্রি গাছ মরে গেছে। আশাশুনি-সাতক্ষীরা, বৈকারী-সাতক্ষীরা, ভোমরা-সাতক্ষীরা, ফিংড়ি-সাতক্ষীরা, মুন্সিগঞ্জ-সাতক্ষীরা ও যশোর-সাতক্ষীরা সড়কে এ চিত্র দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক গাছ মারা গেছে আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়কে। অধিকাংশ মরা গাছে ছাল দেখা যাচ্ছে না।

উদ্ভিদ বিষেশজ্ঞ ও পরিবেশবিদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন জনিতকারণে লবণাক্তা বেড়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট ও মাটির ক্ষার বাড়ায় এসব গাছ মারা যেতে পারে। দ্রুত এসব মরা গাছ অপসারণ করা না হলে যে কোন মুহুর্ত্বে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।

সড়কের দুইপাশে লাগনো মুল্যবান এসব গাছ এখন সড়কে চলাচলকারি যানবাহন ও মানুষের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝেমধ্যে এসব মরা গাছের শুকনো ডাল ভেঙে যানবাহন ও পথচারীদের গায়ে পড়তেও শোনা গেছে।

জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এসব মরা গাছ সড়ক থেকে অপসারণ করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়কের ব্রহ্মরাজপুর এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান ও মোকলেছুর রহমান জানান, গত দুই থেকে আড়াই বছরের ব্যবধানে আশাশুনি সড়কের অন্তত এক হাজারের বেশি বড় বড় রেইনট্রি গাছ মরে গেছে। তবে কী কারণে এসব গাছ মারা গেছে তা বলতে পারেননি তারা । তবে এসব সমস্ত মরা গাছের পচনশীল অংশ ও পোকা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে কিছু সংখ্যক লোক। যে কারণে অধিকাংশ মরা গাছের ছাল নেই। শোনা যাচ্ছে এসব গাছের পচা অংশ ও পোকা ভারতে পাচার করা হচ্ছে বলে তারা জানান।

বৈকারী সাতক্ষীরা সড়কের ভাদড়া এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন জানান, ভারতে প্রতি কেজি রেইনট্রি গাছের ছাল ও পোকার মুল্য ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে কোন একটি গোষ্টি পরিকল্পিতভাবে কোন ওষুধ ব্যবহার করে এসব গাছ মেরে ফেলতে পারে বলে তিনি ধরাণা করেন। এক সঙ্গে এত গাছ মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের অধীনে জেলার বিভিন্ন সড়কে লাগানো ৫ হাজারের অধিক রেইট্রি গাছ মারা গেছে। এসব গাছের মূল্য আনুমানিক তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। মরা এসব গাছ সড়কে পড়ে যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য দ্রুত এগুলো অপসারণ করা হবে।

সাতক্ষীরার সামাজিক বনবিভাগের সহকারী বন রক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, মরে যাওয়া গাছগুলোর বয়স কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ বছর হবে। গাছগুলো মরে যাওয়ার বিষয়ে বনবিভাগের গবেষণা কেন্দ্রে জানানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. নাসরিন আক্তার জানিয়েছেন, রেইনট্রি গাছ মরে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে মাটির লবণাক্তা ও ক্ষার বেড়ে যাওয়া। তাছাড়া প্রত্যেক গাছের আলাদা আলাদা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট থাকে। রেইনট্রি গাছ মৌসুমী বৃষ্টিপাত না হলে তারা মাটির খাদ্য সংকটে পড়ে। ফলে বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তন জনিতকারণে রেইনট্রি গাছ মারা যেতে পারে। লবণাক্ততা বেড়ে মাটির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যেতে পারে।

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, মরা গাছগুলোর অধিকাংশ সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের। খুব কমসংখ্যক গাছ মারা গেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের।। তারপরও দ্রুত মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের মৃত বা ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হবে।

খুলনা গেজেট/ এসজেড

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!