খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

সফর বা ভ্রমণের আদব (পর্বঃ ২৭)

হাফেজ মাওলানা মুফতি জুবায়ের হাসান

মুসলিম ব্যক্তি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, সফর তার জীবনের এক আবশ্যকীয় ও জরুরি অবিচ্ছেদ্য বিষয়; কেননা, হজ্ব, উমরা, যুদ্ধ, জ্ঞান অর্জন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভাই-বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ- এসব ফরয ও ওয়াজিব বিষয় সফর করা ব্যতীত পালন করা সম্ভব নয়। আর এ কারণেই শরীয়ত প্রবর্তক সফর এবং তার বিধিবিধান ও আদবসমূহের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে; একজন আদর্শ মুসলিম ব্যক্তির দায়িত্ব হল তা শিখে নেওয়া এবং সে অনুযায়ী আমল করা।

সফরের বিধি-বিধানসমূহ নিম্নরূপ:
১. চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযগুলো ‘কসর’ করা; সুতরাং সে শুধু দুই রাকাত করে নামায আদায় করবে; তবে মাগরিবের নামায তিন রাকাতই আদায় করতে হবে। আর সে যে শহরে বা গ্রামে বাস করে, তা থেকে প্রস্থান করা থেকে কসর শুরু করবে এবং সেখানে পুনরায় ফিরে আসা পর্যন্ত কসর করবে; তবে যে শহরে সে সফর করেছে, সেখানে ১৫ (পনের) দিন বা তার বেশি অবস্থান করার নিয়ত করলে সে অবস্থায় পূর্ণ নামায আদায় করবে, কসর করবে না; কিন্তু যখন সে নিজ শহরে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবে, তখন নিজ গ্রাম বা শহরে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত পথে কসর করবে। 
আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন:
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِى الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلٰوةِ
তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে, তখন সালাত ‘কসর’ করলে তোমাদের কোনো দোষ নেই। -সূরা নিসা, আয়াতঃ ১০১
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا، يَقُولُ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْمَدِينَةِ إِلَى مَكَّةَ، فَكَانَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ حَتَّى رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ‏.‏ قُلْتُ أَقَمْتُمْ بِمَكَّةَ شَيْئًا قَالَ أَقَمْنَا بِهَا عَشْرًا
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা নবী ﷺ -এর সাথে মদীনা ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দু’রাকাত, দু’রাকাত নামায আদায় করেছেন। (রাবী বলেন) আমি (আনাস রা.)-কে বললাম, আপনারা মক্কায় কয় দিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন, সেখানে আমরা দশ দিন অবস্থান করেছিলাম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১০৮১

২. তিনদিন তিনরাত মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ; আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে মোজার উপর মাসেহ করার বিধান দিয়েছেন— মুসাফির তথা পর্যটকের জন্য তিনদিন তিনরাত এবং মুকীম তথা নিজ বাসস্থানে বসবাসকারীর জন্য একদিন একরাত। -মুসনাদে আহমাদ

 

৩. তায়াম্মুম করা বৈধ, যদি সে পানি না পায়, পানি সংগ্রহ করা তার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়, অথবা তার জন্য পানির দাম অনেক বেশি হয়; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম কর; সুতরাং মাসেহ কর তোমরা তোমাদের চেহারা ও হাত। -সূরা নিসা, আয়াতঃ ৪৩

 

৪. রোজা ভঙ্গ করার সুযোগ বা অবকাশ প্রদান; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। -সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮৪
৫. যানবাহনের উপর দাঁড়িয়ে-বসে যেকোন দিকে ফিরে সুবিধামত নামায আদায়ের সুযোগ; অর্থাৎ মুসাফির অবস্থায় যদি বাহনের উপর দাঁড়িয়ে নামায আদায়ে সমস্যা হয়, তাহলে বসে নামায আদায়ের অবকাশ আছে এবং যদি এমন কোন স্থানে পৌঁছে যেখানে কিবলা কোন্‌ দিকে তা জানা নেই, তাহলে প্রথমতঃ ভালভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে স্থানীয় লোকদের থেকে কিবলা জেনে নিবে। ভালভাবে খোঁজ খবর নিয়ে, কারো কাছে সংবাদ না পেলে নিজে চিন্তা-ভাবনা করে যেদিকটাকে কিবলার দিক বলে প্রবল ধারণা হয় সেদিকে ফিরে নামায পড়ে নিবে। নামাযের মাঝে যদি সঠিক দিক সম্বন্ধে জানা যায় তাহলে সাথে সাথে সেদিকে ঘুরে যাবে। নামায শেষ হবার পর যদি জানা যায় যে, যেদিক ফিরে নামাযা আদায় করা হয়েছে তা কিবলার দিক ছিলনা। তবু নামায হয়ে গেছে। উক্ত নামায পুনরায় পড়তে হবেনা।
কিন্তু ভালভাবে খোঁজ-খবর বা চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই নামায পড়লে, নামাযের মাঝে কিবলা সঠিক বা ভুল সম্বন্ধে সংবাদ পেলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। নামায শেষে কিবলা সঠিক জানতে পারলে নামায হয়ে যাবে, পুনরায় পড়া লাগবেনা। তবে যদি কিবলা ভুল হয়, তাহলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। উক্ত নামায আবার পড়তে হবে।

আর হ্যা, কম্পাস ব্যবহার করে যদি সঠিক দিক নির্ধারণ করা সম্ভব হয়, তাহলে তার মাধ্যমে কিবলা নির্ধারণ করে নামায আদায় করা সহীহ হবে; কেননা, এটাও এক প্রকার খোঁজ-খবর এর অন্তর্ভুক্ত।

৬. যোহর ও আসর, অথবা মাগরিব ও এশা’র নামায একত্র করে আদায় করা বৈধ; সুতরাং সে যোহরের নামাযকে আসরের প্রথম ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্বিত করে একেবারে যোহরের শেষ ওয়াক্তে যোহর ও আসরের ১ম ওয়াক্তে আসর নামায এক সাথে আদায় করতে পারবে এবং মাগরিবকে এশা’র পূর্ব পর্যন্ত বিলম্বিত করে একেবারে শেষ ওয়াক্তে মাগরিব ও ১ম ওয়াক্তে এশা এক সাথে আদায় করবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ فِي سَفَرِهِ إِلَى تَبُوكَ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর তাবুক সফরকালে যোহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করেছিলেন। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস ৩১৮
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
লেখক- ইমাম ও খতিব
কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সদস্য, আল মাহমুদ ফাউন্ডেশন, খুলনা।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!