খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ আট কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির
  বিশ্বকাপ বাছাই : মার্টিনেজের ভলিতে পেরুর বিপক্ষে জয় পেল আর্জেন্টিনা

দেড় বছর পর উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার

‌গেজেট ডেস্ক

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। নেপিডোর সেনা সমর্থিত সরকারের ক্ষমতা দখলের পর প্রথমবারের মতো দুদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার (১৪ জুন) ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে নেপিডোর পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব উ চান আয় নেতৃত্ব দেবেন।

দেরিতে হলেও মিয়ানমারের সেনা সমর্থিত সরকারের সঙ্গে সচিব পর্যায়ের আলোচনার করতে পারার বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ঢাকা। বৈঠক থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ সামগ্রিক বিষয়ে ভালো খবরের আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করাটা আমাদের জন্য খুব জরুরি। মিয়ানমারে সেনা শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে টেকনিক্যাল কমিটির মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। এরইমধ্যে অ্যাড-হক টাস্কফোর্স ফর ভেরিফিকেশন অব দ্য ডিসপ্লেসড পার্সনস ফ্রম রাখাইন-এর বৈঠক হয়েছে। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়নি।

মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা তো চেষ্টা করে যাচ্ছি, তাদের (মিয়ানমার) এনগেজ করার। আমাদের বারবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে। বৈঠকটা দুদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে হবে। বৈঠকটা যেহেতু বড় কর্মকর্তাদের মধ্যে হচ্ছে, আমরা আশা করছি ভালো কিছু হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে এনগেজমেন্ট হবে।

ঢাকা-নেপিডোর এ বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি প্রথম প্রায়োরিটি। আমাদের দিক থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে বিভিন্ন প্রস্তাব আছে, সেগুলো মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাবে অসম্পূর্ণ অবস্থায় আছে; বৈঠকে সেগুলো আবার মনে করিয়ে দেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন বা যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল পরের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দুদেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে। কিন্তু ওই মাসের শুরুতেই মিয়ানমারে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। মিয়ানমারে অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। এরপর ওই বছর আর আলোচনার টেবিলে বসতে পারেনি ঢাকা-নেপিডো। এর দীর্ঘ এক বছর পর চলতি বছরের শুরুর দিকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে দুদেশ। অ্যাড-হক টাস্কফোর্স ফর ভেরিফিকেশন অব দ্য ডিসপ্লেসড পার্সনস ফ্রম রাখাইনের ওই বৈঠকই ছিল সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর টেকনিক্যাল কমিটি পর্যায়ে দুদেশের প্রথম বৈঠক।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এবারের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে জোর দেবে ঢাকা। এক্ষেত্রে নেপিডোর দেওয়া কথা না রাখার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া আটকে থাকা ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে জটিলতা ও ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে মিয়ানমারকে দায়িত্ব নিতে বলা হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পর এখন পর্যন্ত আট দফায় মিয়ানমারের কাছে ৮ লাখ ৩০ হাজার জনের তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে ফেরত দিয়েছে। তবে এ তালিকা এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। কেননা, এ তালিকায় একই পরিবারের অনেকের নাম নেই। এবারের বৈঠকে অসম্পূর্ণ তালিকার বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের দেওয়া তালিকায় কি খুঁত রয়েছে সেগুলোর বিষয়েও আলোচনা হবে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। কেননা, রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা। তবে ২০২০ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য একমাত্র আশা জাগানোর ঘটনা যেটি ঘটেছে তা হলো— মিয়ানমারে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর সম্ভাব্য গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে তাদের সুরক্ষা দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!