ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার অভিযোগে ভারতে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলোর বারাকপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের জয়নাাল হাওলাদারের ছেলে। বাবা ও ছেলে দুজনই রং মিস্ত্রির কাজ করতেন।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামে জিহাদ হাওলাদারের বাড়িতে থাকেন তার বাবা জয়নাল হাওলাদার, মা, স্ত্রী মুন্নী বেগম ও দেড় বছরের শিশু সন্তান। চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাচেষ্টা, মারামারি, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামি তিনি। যশোরের কোনো এক মামলায় তাদের বাড়িতে ডিবি পুলিশের অভিযান চালানোর পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যারি ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে ভারতে জিহাদ হাওলাদার নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। ভারতের দিল্লীতে অবৈধভাবে জিহাদ থাকতেন এবং সেখানে তিনি কসাই জিহাদ নামেই পরিচিত ছিলেন।
সিআইডি জানায়, জিহাদ অবৈধভাবে দিল্লীতে বসবাস করতেন। দুই মাসে আগে সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার জন্য তাকে কলকাতায় আনে আখতারুজ্জান শাহীন। খুনের সময় আরও চার বাংলাদেশি ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। কিলিং মিশন শেষে মরদেহ টুকরো টুকরো করে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে গুম করা হয় বলে জানান জিহাদ।
দিঘলিয়া থানা পুলিশ সূত্র জানা গেছে, জিহাদ হাওলাদোরের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় ২০২৩ সালের ৮ জুন অস্ত্র আইন, ২০২০ সালেল ২৫ মে মারামারি ও ২০২০ সালের ২২ এপ্রিল মারামারির মামলা রয়েছে। তবে অনেক দিন ধরে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
জিহাদ হাওলাদারের স্ত্রী মুন্নী বেগম জানান, ২০১৯ সালে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে জিহাদের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সেসময় জিহাদ রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর তাদের সংসার একটা ছেলের জন্ম হয়। এক বছর আগে ঢাকা ও যশোরের দুটি মামলায় জড়িয়ে পড়ায় তিনি গা ঢাকা দেন। সেই থেকে জিহাদ দেশের মধ্যে কিংবা অন্য দেশে আছে সেটা তারা জানেন না। সর্বশেষ তার সঙ্গে এক দেড় মিনিটের জন্য মুঠোফোনে কথা হয়েছিল প্রায় ৯ মাস আগে। শুধু তার আড়াই বছরের ছেলে ও বাবা-মা কেমন আছে সেই বিষয়ে খবর নিয়েছিল।
শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা অথবা এই ধরনের কোনো অপকর্মে জড়িত ছিল কিনা সেটিও জানেন না তার স্ত্রী।
মুন্নি বেগম জানান, তার স্বামীর বিরুদ্ধে ঢাকায় ও যশোরে মামলা রয়েছে। টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রচারের পর তার বাড়িতে সকাল থেকেই এলাকার লোকজন ভিড় করতে শুরু করে। জিহাদের কারণে তার নিজের মা-বাবার সাথে তার সম্পর্ক নেই। জিহাদের বড় দুই ভাইও তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করে না। শ্বশুর জয়নাল হালদারের আয়ে তাদের সংসার চলে।
এদিকে এলাকার অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে এমন কাজ জিহাদ কীভাবে ঘটাতে পারে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে এলাকাবাসী শাস্তিও দাবি করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল আকন্দ জানান, জিহাদ রং মিস্ত্রির কাজ করতো। এলাকায় সে নম্র ও ভদ্রভাবেই চলাফেরা করতো। কয়েক বছর আগে এখানে গ্রামের স্থানীয় রাজনীতির দুই গ্রুপের মারামারি ঘটনায় তার নামসহ গ্রামের অনেকের নামে মামলা হয়। তারপর থেকে সে নিখোঁজ।
জিহাদের প্রতিবেশী সোহেল জানান, জিহাদ স্থানীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মামলায় জড়ানোর পর জেলও খাটে। তারপর জামিনে বের হয়ে একটি ডাকাতি মামলায় জড়ায়। তারপর একটি হত্যা মামলায়ও সে জড়ায়।
জিহাদের বাবা জয়নাল হায়দার বলেন, জিহাদের সঙ্গে বহুদিন ধরে আমার কথা হয়নি। ঢাকায় একটি ঝামেলার পর জেলে ছিল। তার কারণে আমার পরিবার শেষ হয়ে গেছে। তার এই কর্মকাণ্ডে আমরা হতাশ। আমার ছেলে অপরাধী হলে তার বিচার হোক। এমন ছেলে আমি চাই না, যে ছেলের জন্য মা-বাবার মুখ থাকে না। এমন ছেলে না থাকাই ভালো।
তিনি বলেন, স্থানীয় মারামারি থেকেই জিহাদ সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
খুলনা গেজেট/এমএম