করোনাকালে সোনার দাম দফায় দফায় বাড়ায় খুচরা পর্যায়ে বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে ভরিতে ষোল হাজার টাকা। ফলে ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের সব থেকে বেশি স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রি হয় রোজার ঈদ, পূজা ও নতুন ধান ওঠাকে কেন্দ্র করে। কিন্ত সব কিছুই করোনার মধ্যে পড়ে যাওয়ায় মানুষ বিলাস দ্রব্যের চেয়ে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসের কেনাকাটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। আর এর প্রভাব পড়েছে দেশীয় খুচরা স্বর্ণের বাজারগুলোতে।
খুলনা নিউমার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে টানা ৬৬ দিন ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এসময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সাধারণ ছুটির পর দোকান খুললেও বিক্রি নেই বললেই চলে। এর উপর দফায় দফায় বেড়ে চলেছে স্বর্ণের দাম। তারা বলেন, অনেকে দোকান থেকে কর্মী ছাটাই করতে বাধ্য হয়েছেন। করোনা পূর্ব সময়ের তুলনায় বিক্রি ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। কোন কোন দিন একজন ক্রেতাও আসেন না!
হেলাতলা মোড় সংলগ্ন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ। তার ওপর সোনার দাম বাড়তে বাড়তে অনেকেরই নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে নতুন করে সোনার গহনা বানাতে দোকানমুখী হচ্ছেন না ক্রেতারা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের ভরি প্রতি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪৪৯ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৫৮ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম ৭৩ হাজার ৩০৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬৪ হাজার ৫৬০ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫৪ হাজার ২৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম পূর্বের নির্ধারিত ৯৩৩ টাকাই বহাল রয়েছে।
বাজুসের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম অস্থির হয়ে উঠেছিল। এতে ৪ জানুয়ারি থেকে ২২, ২১, ১৮ ক্যারেট ও সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের ভরিতে দাম বেড়েছে ১ হাজার ১৬৬ টাকা। প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম বেড়ে ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা হয়েছে। এছাড়া ২১ ক্যারেট ৫৮ হাজার ২৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৫৩ হাজার ১৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৪০ হাজার ২৪০ টাকা হয়েছে।
জানা গেছে, বৈশ্বিক এ মহামারির মধ্যে ছয়বার স্বর্ণের দাম বাড়াল বাজুস। গেল ১৭ সেপ্টেম্বর স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করে বাজুস। যা ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ইউএস ডলারের প্রাধান্য খর্ব, তেলের দরপতন ও পর্যাপ্ত আমদানির অভাবে দেশীয় বুলিয়ন/পোদ্দার মার্কেটে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে বাজুসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শুক্রবার থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণ ও রুপার মূল্য নির্ধারণ করেছে।
খুলনা গেজেট / এমএম