আহমেদাবাদ টেস্টে ভারতের হয়ে আলোর ঝলকানি সব দিল্লি ক্যাপিটালসের বোলাররা দেখাচ্ছিলেন। প্রথম ইনিংসে অক্ষর প্যাটেল ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিয়েছিলেন ৩টি। বাকিটা গিয়েছিল ইশান্ত শর্মার ভাগে। আইপিএলে এ তিনজনই খেলেন দিল্লি ক্যাপিটালসে।
আজ দ্বিতীয় ইনিংসে ইশান্ত শর্মা বল হাতেও পেলেন না। আগের মতোই ৯ উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন অশ্বিন (৪) ও অক্ষর (৫)। ইংল্যান্ডের শেষ উইকেট জুটির সামনে আচমকা ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে বল তুলে দেওয়া হলো। প্রথম ইনিংসে গোলাপি বলটা নিয়ে হাত ঘোরানোর সুযোগ না পাওয়া সুন্দর চতুর্থ বলেই তুলে নিলেন জিমি অ্যান্ডারসনকে। আহমেদাবাদের উইকেটের দিল্লি প্রেমে এভাবেই দাগ টেনে দিলেন সুন্দর।
ভারত দলের অবশ্য এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। স্পিনারদের এমন কাড়াকাড়ি করে উইকেট পাওয়াতেই যে ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেল ৮১ রানে। তৃতীয় টেস্ট জিতে চার টেস্টের এই সিরিজে এগিয়ে যেতে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়াল মাত্র ৪৯ রানের! সে লক্ষ্যে নেমে ডিনারের আগেই বিনা উইকেটে ১১ রান করে ফেলেছে স্বাগতিক দল।
সুন্দরকে তবু উইকেট পেতে চতুর্থ বলের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। দিনের মূল দুই তারকার ততক্ষণ অপেক্ষা সহ্য হয়নি। ৩৩ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডকে ধাক্কা দিতে অক্ষরের কোনো অপেক্ষাই করতে হয়নি। অক্ষরের প্রথম তিন বলেই তিনবার আউটের চিহ্ন দেখিয়েছিলেন আম্পায়ার। প্রথম বলেই ফিরেছেন জ্যাক ক্রলি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে দুবার মৃত্যুবাণ দেখেছেন জনি বেয়ারস্টো। দ্বিতীয় বলে রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত বদলাতে পেরেছিলেন। তৃতীয় বলে লাইন মিস করে বোল্ড হওয়ায় সে সুযোগ আর পাননি।
এর আগে স্পেলের প্রথম বলেই উইকেট পাওয়ার কাণ্ড অবশ্য দিনের প্রথম সেশনেই দেখা হয়ে গেছে। অলরাউন্ডার বেন স্টোকসসহ চার পেসার নিয়ে নামাটা ইংল্যান্ডের কত বড় ভুল ছিল, সেটা অধিনায়ক জো রুটই প্রমাণ করে দিলেন। ভারতের ইনিংসে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে রোহিত শর্মা ফেরার পর হাত ঘোরানোর ইচ্ছে হয়েছিল রুটের। ইংল্যান্ড মাত্র এক স্পিনার নেওয়ায় এতক্ষণ এই ভয়ংকর পিচে উইকেট তোলার সব ভার একাই বহন করতে হচ্ছিল জ্যাক লিচকে। রুট বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই ফিরিয়েছেন ঋষভ পন্তকে। এরপর যা হলো, সেটা রুটেরও হয়তো বিশ্বাস হয়নি।
ভারতের ১১৫ রানে রোহিত ফেরার পর বোলিংয়ে এসেছিলেন। ভারত অলআউট হয়েছে ১৪৫ রানে। এর মাঝে ভারতের যে ৫ উইকেট পড়েছে, সবগুলোই রুটের। সেটাও মাত্র ৮ রান খরচায়! টেস্ট ইতিহাসেই এর চেয়ে কম খরচায় ৫ উইকেট প্রাপ্তির ঘটনা মাত্র ৪টি!
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংস শেষে রুটের বল বুঝে নেওয়ার স্বাদটা তেতো করে দিয়েছেন অক্ষর। মাত্রই ম্যাচের রূপ পালটে দিয়েছেন মনে হওয়া এক স্পেল শেষ করে মাঠ ছেড়েছিলেন, সেই রুটই আবার ব্যাট হাতে নেমে গেলেন ইংল্যান্ড ইনিংসের চতুর্থ বলে। একটু পরে ডম সিবলিকেও তুলে নিলেন অক্ষর। খানিকবাদে রুটকেও। যদিও এর আগে আরেকটি রিভিউ এলবিডব্লুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল রুটকে। এত দিন রিভিউ ভারতের পক্ষে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা ইংল্যান্ড সেই সিদ্ধান্তে নিজেদের ভাগ্যবান ভেবেছিল কি না, কে জানে।
ভেবে থাকলেও তৃপ্তিটা বেশিক্ষণ টেকেনি। অক্ষর কিছুক্ষণ পরই রুটকে তুলে নিয়েছেন ১৯ রানে। ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৫৬। মাঝে অশ্বিনকে প্রথম উইকেটের স্বাদ বুঝিয়ে দিয়ে ফিরেছেন স্টোকসও। সেই শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকেই ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকে টেনে নেওয়া রুটের বিদায়ের পর চেনা চিত্রনাট্যই দেখা দিল। ১৫ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে বসল ইংল্যান্ড। অক্ষরের ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট আর ক্যারিয়ারে প্রথমবার ম্যাচে ১০ উইকেট—দুটিই হয়ে গেছে।
ইংল্যান্ডের ৮১ রানে অলআউট হওয়া নিশ্চিত করে দিয়েছে আরেকটি জিনিস। ইংল্যান্ড দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৯৩ রান করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের লক্ষ্য ৪৯ রান। দিনের শেষ সেশনে বল যত বাজে আচরণই করুক, এ ম্যাচে ভারত হারবে, এমনটা কেউ মনে হয় না আশা করছেন। ডিনারের আগেই বিনা উইকেটে ১১ রান করে ফেলেছে স্বাগতিক দল। ভারত হারলে তো কথাই নেই, আর লক্ষ্য পেরিয়ে ৫২ না করে ফেললেও একটি রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে।
মীমাংসা হয়েছে এমন টেস্টে দুই দল মিলিয়ে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড ২৩৪। সেটা এই টেস্টে দুই দলের প্রথম ইনিংসেই পেরিয়ে গেছে। ভারত যদি ৫২ রান না করে তবে ১৯৪৬ সালের পর দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে কম রান তোলার রেকর্ডটি কিন্তু হয়েই যাবে আজ।
খুলনা গেজেট/কেএম