খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  চাঁদপুরে জাহাজে ৭ জনকে হত্যা: আসামি ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে

৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া না দিলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠাবে না আদানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া বিল না দিলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে ভারতের আদানি গ্রুপ। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে কমিয়ে এনেছে তারা।

সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া রোববার (৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশকে এই সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের কাছে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার পাবে। যা বাংলাদেশি অর্থে ১০ হাজার কোটি টাকার সমান।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, আদানি গ্রুপ প্রথমে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। এছাড়া বকেয়া পরিশোধের নিশ্চয়তার জন্য তারা ১৭০ মিলিয়ন ডলারের লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) চেয়েছিল।

পিডিবি যদিও কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি ইস্যু করেছিল। কিন্তু এটি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি অনুযায়ী ছিল না। এজন্য ডলার সংকটকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এর পরপরই গত ৩১ অক্টোবর আদানি গ্রুপ তাদের ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু গত শুক্রবার দিনের বেলা আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে মাত্র ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশে লোডশেডিং দেখা দেয়।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের মধ্যে আদানি গ্রুপই সবচেয়ে বড়। এরপর যথাক্রমে রয়েছে পায়রা (১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (১ হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট) এবং এসএস পাওয়ার (১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট)।

পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটের বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এসএস পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কয়লা সংকটের কারণে ইতিমধ্যে অর্ধেক ক্যাপাসিটি নিয়ে চলছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া দাবি করেছে, তাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বিদ্যুৎ ইউনিট জ্বালানি কেনা কমিয়ে দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশ সময়মতো জ্বালানির অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। এছাড়া অর্থ পরিশোধেও ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এতে করে অনেক বকেয়া জমে গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অক্টোবরে চুক্তি অনুযায়ী আদানিকে ৯০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আগের মাস গুলোতে ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার করে দিয়েছে। যেখানে প্রতিমাসে বিল বাবদ ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। আদানির কাছ থেকে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনে ১০ থেকে ১২ টাকায়। এরসঙ্গে ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা কেনার বিষয়টি জড়িত।

এদিকে আদানি গ্রুপ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কোম্পানিটির এক নির্বাহী কর্মকর্তা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে আগে বলেছিলেন, তারা আশা করেছিলেন একটি সমাধান হবে। কিন্তু সময় মতো বিল না দেওয়া এবং বিষয়টি পরিষ্কার না করায়, ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়। কারণ তাদের যেসব বিনিয়োগকারী আছে তাদেরও অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

সমস্যায় আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রও 

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আদানির এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সম্ভবপরতাও শঙ্কায় পড়বে। কারণ শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এই কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ না দিলে তাদের একটি ৮০০ মেগাওয়াটের ইউনিট বেকার পড়ে থাকবে। যদি তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে মাসে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে বিল নিতে পারে তাহলে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে।

এদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই আদানি গ্রুপ সতর্ক হয়ে যায়। কোম্পানিটির মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয় বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি শঙ্কায় পড়ে যেতে পারে। এ কারণে তারা ভারতের ভেতর বিদ্যুৎ সরবরাহের উপায় খুঁজতে থাকে। এখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ না দিলে অভ্যন্তরীণ গ্রিডে যুক্ত হবে তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!