২০১৯-২০ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭১ শতাংশ কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ছিল ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম ছিল না ব্যাংকগুলোতে। করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ হওয়ায় অর্থ সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অনেকে বেকার হয়েছেন। আবার কারও কাজ আছে কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় সঞ্চয় তো পরের কথা উল্টো জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছে মানুষ। এছাড়া অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে সরকার। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে গেছে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সরকার এ খাতের ওপর বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করে। আগে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য কোনো ক্রেতাকে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন জমা দিতে হতো না। কিন্তু এখন এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে।
এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। একই সাথে পুরো বিক্রি কার্যক্রমটি এখন অনলাইনের মাধ্যমে মনিটর করায় কেউ ইচ্ছে করলে, সীমা অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র বা একই নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনতে পারবে না। আর এসব কারণেই বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্র কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গেল ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে তিন হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এতে করে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ দুই হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। যা আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ছিল দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।
এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় গত সাত বছর পর সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ সরকার অর্ধেকের বেশি কমিয়ে আনে। গেল অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাতে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৫ হাজার ৭৬ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়।
এদিকে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২৭ কোটি টাকা। (সূত্র-দৈনিক জনকন্ঠ)
খুলনা গেজেট / এনআইআর