বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু জাফর। তার পিতা মৃত আব্দুস সোবহান, আর মাতা আমেনা খাতুন। তিনি হাজী মহসীন রোডের স্থায়ী বাসিন্দা। জন্মেছেন ১৯৫২ সালের ১২ নভেম্বর। এসএসসি পাশ করে আযমখান কমার্স কলেজে লেখাপড়া করেন।
মুজিববাহিনী খুলনা জেলা ৭১ গ্রন্থে তার বীরত্বে কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় রাজনীতিকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ১৯৭১ সালের মার্চেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাজনীতিকদের পরামর্শ নিয়মিত বন্ধুদের শোনাতেন। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে খুলনা শহরে পাক সেনাদের তৎপরতা শুরু হলে মা ও বোনকে বানিয়াখামার খালার বাড়িতে রেখে আসেন। হাজী মহসীন রোডস্থ নিজেদের বাড়ি তখন স্বাধীনতা প্রত্যাশী বন্ধুদের মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয়। হাজী মহসীন রোডের অধিবাসী, আয়কর আইনজীবী মনিরুল হুদা (পরবর্তীতে খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার এম ইউ কিসলু তাদের দু’টি ২.২ বোরা রাইফেল ও গুলি দিয়ে সহযোগিতা করেন।
২৬ মার্চ দুপুরে ডাকবাংলা মোড়ের মিন্টু একটি সেকেন্দার ব্র্যান্ডের একনলা বন্দুক ও একটি মার্ক ফোর রাইফেল দিয়ে সহযোগিতা করেন। এতে স্বাধীনতা প্রত্যাশীদের উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে যায়। ২৭ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউজে পাকবাহিনীর ঘাঁটিতে এ অস্ত্র দিয়ে তারা প্রথম আক্রমণ করেন। পাকবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি পেলে অস্ত্রসহ তারা রূপসা নদী পার হয়ে নারকেল বাগানে (জাহানারা মঞ্জিলে) কয়েকজন সেনা সদস্য ও কয়েকজন মুজাহিদদের নিয়ে ক্যাম্প গড়ে তোলেন। খুলনাস্থ বিপ্লবী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান টুকুর নেতৃত্বে এখানে ক্যাম্প গড়ে ওঠে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ৪ এপ্রিল গল্লামারীস্থ রেডিও সেন্টার দখলের জন্য যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন। এই যুদ্ধের অধিনায়ক ছিলেন চিতলমারী থানার আড়–য়াবুর্নী গ্রামের সুবেদার শেখ জয়নাল আবেদীন। এখানকার যুদ্ধে অধিনায়ক, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর হাবিবুর রহমান ও মোসলেম শহীদ হন।
পরবর্তীতে দেশ ত্যাগ করে ভারতের মিলিটারি একাডেমি দেরাদুনে টান্ডুয়ায় ৪৫ দিনের গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ব্যারাকপুর সেনানিবাস থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক প্রধান, সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের নির্দেশনা নিয়ে বৃহত্তর খুলনা মুজিব বাহিনীর প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকুর নেতৃত্বে দেশে প্রবেশ করে পাইকগাছা থানার পাতড়াবুনিয়া বিএলএফ’র হেডকোয়ার্টারে যোগ দেন।
তারপর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাইকগাছা থানার কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্প দখল করার জন্য তালা থানার কানাইদিয়া অংশে তিন দিনব্যাপী যুদ্ধে অংশ নেন। এ যুদ্ধে তার ডেপুটি লিডার, আযম খান কমার্স কলেজের ছাত্র রূপসা উপজেলার বেলফুলিয়ার সন্তান আনোয়ার হোসেন শহীদ হন। তার চাচাতো ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক খোকা (আরসিএল অপারেটর) আহত হন। তারপর খুলনা শহর দখলের যুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই