খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত
  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত

৬ মাসেও সংস্কার হয়নি হাজরাখালীর বেড়িবাঁধ, ঘরে ফেরার প্রতিক্ষায় মানুষ

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি আম্পান বিধ্বস্ত আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী ও মাড়িয়ালা গ্রামের অনেক মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ প্লাবিত হয়ে পড়ায় আশাশুনির শ্রীউলা ও প্রতাপনগর এবং শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের সহাস্রাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। বাড়িঘর হারিয়ে পাউবো’র বেড়িবাঁধ কিম্বা উচু স্থানে টোং ঘর বানিয়ে এখনো বসাবাস করছে গৃহহীন এসব মানুষ।

আম্পান বিধ্বস্ত আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী গ্রামের রহিম সানা বলেন, ২০ বিঘা জমিতে মাছের ঘের ছেল আমার। তা দিয়ে পাঁচ ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী মিলিয়ে সাতজনের সংসার ভালোভাবে চলত। আরও কিছু জমাতেও পারতাম। এখন কিছু নেই। বাড়িঘর, মাছের ঘের সব নদীতে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়ির ওপর পলিথিন দিয়ে খুপরি বানিয়ে বসবাস করছি সেই আম্পানের পরের দিন থেকে। ছয় মাস পার হয়ে গেল, এখনো অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বাঁধ বাধার কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি আমরা সবাই।

তিনি আরো বলেন, গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর হাজরাখালী স্থানে পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পুরো শ্রীউলা ইউনিয়ন তলিয়ে যায়। ধ্বসে পড়ে কাঁচা ও পাকা ঘরবাড়ি। মাছের ঘের, চিংড়িঘের ও ফসলি জমির পাশাপাশি রাস্তাঘাট তলিয়ে সব একাকার হয়ে যায়। গ্রামের বাসিন্দারা যে যার মতো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। অনেকে চলে যায় আত্মীয় স্বজনের বাড়ি কিংবা কোন শহরে। আম্পান আঘাতের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি।

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী এলাকাটি অনেকটা জনমানবশূন্য। কাঁচা ঘরবাড়ি অধিকাংশ মিশে গেছে নদীর পানিতে। আর পাকা ঘরবাড়ি পড়ে আছে কাত হয়ে। এলাকাজুড়ে এখনো জোয়ার-ভাটা চলছে। যাঁরা এলাকার বইরে যেতে পারেননি, তারা পাউবো’র বেড়িবাঁধের উপর খুপরি তৈরি করে বসবাস করছেন। তাদের করুণ অবস্থা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

হাজরাখালী গ্রামের শামছুন নাহার বলেন, ‘দুই পাশেই পানি, মাঝখানে জেগে আছে পাউবো’র বেড়িবাঁধ। এ বাঁধের ওপর বসবাস করছি ৬৪টি পরিবার। আমাদের গ্রামে প্রায় সাড়ে ৩০০ পরিবারের বসবাস ছিল। ছয় মাস ধরে রইছি এ বাঁধের ওপর। আর কখনো বাড়ি ফিরতি পারব না। ১৫ কাঠার ভিটেবাড়ি সব নদীতে চলে গেছে। শিশু ছেলেমেয়েরা খেলা করবে, সে উপায় নেই। এলাকায় কোনো শৌচাগার নেই। খাবার পানি আনতে যেতে হয় তিন মাইল দূর মাড়িয়ালায়। তা-ও আবার নদীতে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কাজ নেই এলাকায়, তাই বাড়ির পুরুষ মানুষ সব দূর গ্রামে গেছে কাজের সন্ধানে। ঘরে খাবার নেই। কাল কী খাওয়াব ছেলে মেয়েদের তার ঠিক থাকে না। অনেক কষ্টে আছি আমরা।

শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল বলেন, আশাশুনি উপজেলার ২২টি গ্রাম নিয়ে শ্রীউলা ইউনিয়ন। প্রায় আট হাজার পরিবারে এ ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। আম্পানের আঘাতে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ এখন ঘরছাড়া। বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে আছে ছয় মাস হয়ে গেলেও সংস্কার না হওয়ায় এখনো পানিবন্দী ঘর বাড়িগুলো।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২-এর আশাশুনির শ্রীউলা এলাকার দায়িত্বে থাকা শাখা কর্মকর্তা রাব্বি হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে খোলপেটুয়া নদীর হাজারাখালী এলাকায় ৮০ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কয়েকবার স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। বর্তমানে ওই বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। মাপজরিপের কাজ শেষ। খুব শীঘ্রেই তারা কাজ শুরু করবেন।

তিরি আরো বলেন, আগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ আটকানোর জন্য ভাঙ্গন পয়েন্টে ৩৩৫ মিটার রিং বাঁধ দেওয়া হবে। পরে মূল ভাঙ্গনকবলিত এলাকার ৮০ মিটার সংস্কার করা হবে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রমিকদের থাকার জায়গা ঠিক করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হবে। বাঁধ মেরামত করা গেলে আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হবে যাবে। বাসযোগ্য হবে এসব এলাকা।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!