দুই পাকিস্তানী খুশদিল শাহ ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটিং নৈপুণ্যে হ্যাটট্রিক জয় পেয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ১৭তম ম্যাচে কুমিল্লা ৩৩ রানে হারায় ঢাকা ডমিনেটর্সকে। এর ফলে ছয় ম্যাচে তিনটি করে জয় ও হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠলো কুমিল্লা। অন্য দিকে ৫ ম্যাচে ১ জয় ও ৪ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে ঢাকা।
প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮৪ রান করে কুমিল্লা। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ২৪ বলে ৬৪ রান করেন খুশদিল। ৪৭ বলে অপরাজিত ৫৫ রান করেন রিজওয়ান। জবাবে নাসিরের ৪৫ বলে অনবদ্য ৬৬ রানের পরও ৪ উইকেটে ১৫১ রানে শেষ হয় ঢাকার ইনিংস।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন ঢাকার অধিনায়ক নাসির হোসেন। বল হাতে প্রথম ওভারে আক্রমণে এসে দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই উইকেট নেন ঢাকার পেসার তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের বলে থার্ড ম্যানে জুবায়ের হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন কুমিল্লার মারকুটে ওপেনার লিটন দাস।
তিন নম্বরে নেমে দ্রুত রান তুলেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। তার মারমুখী ব্যাটিংয়ে পাওয়ার-প্লেতে ৪২ রান পায় কুমিল্লা। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৩ বলে ৩১ রান করেন ইমরুল। অন্যপ্রান্তে আরেক ওপেনার পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান ছিলেন শান্ত মেজাজে। অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে ইমরুলকে থামান নাসির। ২৬ বল খেলে ৩৩ রান করেন ইমরুল।
দলীয় ৪৭ রানে ইমরুলের বিদায়ে ক্রিজে আসেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জনসন চার্লস। রিজওয়ানের সাথে রানের চাকা সচল রাখেন চার্লস। জুটিতে ৩৫ বলে ৪০ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন তারা। ১৪তম ওভারে পাকিস্তানী পেসার মোহাম্মদ ইমরানের বলে আউট হওয়ার আগে চার্লস ১৯ বলে ২০ রান করেন ।
চার্লসের বিদায়ে উইকেটে এসেই ঝড় তোলেন পাকিস্তানের খুশদিল শাহ। ঢাকার আফগানিস্তানী স্পিনার আমির হামজার করা ১৬তম ওভারে ৩টি ছক্কা ও ২টি চার মারেন তিনি। ঐ ওভার থেকে ২৯ রান পায় কুমিল্লা। পেসার মুক্তার আলির পরের ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মেরে দলকে ২০ রান পাইয়ে দেন খুশদিল।
১৮তম ওভারে চারের সহায়তায় এবারের আসরে দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি করেন খুশদিল। ১৮ বলে টি-টোয়েন্টিতে দশম হাফ-সেঞ্চুরি করেন তিনি। পরের ওভারের শেষ বলে সৌম্য সরকারের ডেলিভারিতে লেগ বিফোর আউট হন খুশদিল। তার আগে ২৬৭ স্ট্রাইক রেটে ২৪ বলে ৬৪ রান করেন। ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। চতুর্থ উইকেটে রিজওয়ানকে নিয়ে ৩৬ বলে ৮৪ রানের জুটি গড়েন খুশদিল।
শেষ ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রিজওয়ান। এজন্য ৪৫ বল খেলেন তিনি। ২০ ওভার খেলে ৪ উইকেটে ১৮৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় কুমিল্লা। ঢাকার তাসকিন-নাসির-ইমরান ও সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন।
১৮৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট হাতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় ঢাকা। তিন ওভার শেষে ১২ রানেই হারিয়ে ফেলে ২ উইকেট। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে পাকিস্তানী পেসার হাসান আলির শিকার হন সৌম্য সরকার। আগের ম্যাচের মত এবারও শূন্য হাতে ফিরতে হয় সৌম্যকে।
স্পিনার তানভীর ইসলামের শিকার হয়ে খালি হাতে বিদায় নেন তিন নম্বরে নামা ইংল্যান্ডের রবিন দাসও।
তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করে বেশি দূর যেতে পারেননি ওপেনার আহমেদ শেহজাদ ও মোহাম্মদ মিথুন। ২০ বলে ২২ রান আসার পর ভাঙ্গে শেহজাদ-মিথুন জুটি। রান আউটের শিকার হন ১৯ রান করা শেহজাদ।
চতুর্থ উইকেটে মিথুন ও অধিনায়ক নাসিরের ৪২ বলে ৫১ রানের জুটি হলেও, ঢাকার আস্কিং রেট বেড়ে যায় অনেক । মোসাদ্দেকের প্রথম শিকার হয়ে বিদায় নেয়ার আগে ৩৪ বলে ৩৬ রান করেন মিথুন।
এমন অবস্থায় ম্যাচ জিততে শেষ ৫ ওভারে ৯২ রান দরকার পড়ে ঢাকার। ১৬ থেকে ১৯ ওভারে ৫৩ রান তোলেন নাসির ও আরিফুল। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫১ রান তুলতে পারে ঢাকা।
৩৬ বল খেলে এবারের আসরে প্রথম অর্ধশতক পাওয়া নাসির করেন অপরাজিত ৬৬ রান। তার ৪৫ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ২টি ছয় ছিলো। ১৭ বলে ২৪ রান তুলে অপরাজিত থাকেন আরিফুল। কুমিল্লার হাসান-তানভীর ও মোসাদ্দেক ১টি করে উইকেট নেন।