মহামারীতে সরকার ঘোষিত ‘সাধারণ ছুটির’ সময় যে ৫০ লাখ ওএমএস কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল, তার মধ্যে সাত লাখ ভুয়া কার্ড পাওয়া গেছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ তথ্য দেন বলে বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুমোদন দেওয়া হয় ৩০ ডিসেম্বর।
বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “করোনার সময় ৫০ লাখ ওএমএস কার্ড বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭ লাখ ভুয়া কার্ড পাওয়া গেছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী সাধন কুমার মজুমদার বুধবার বলেন, গত বৈঠকে ৭ লাখ ভুয়া কার্ডের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা যেন আর না হয়, সেজন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাধ্যমে স্মার্ট ওএমএস কার্ড প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সব এলাকা থেকে এক্সেল শিটের মাধ্যমে তথ্য এনেছি। আইসিটি বিভাগ কার্ড তৈরি করছে। এই কার্ডে কার্ডধারীর ছবিসহ সকল তথ্য থাকবে। ফলে একই ব্যক্তির নামে বা তথ্য ব্যবহার করে নতুন কার্ড করা যাবে না।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব অফিস-আদালত এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয় সরকার। ফলে বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। মানুষের ওই ঘরবন্দি দশা চলে ৩১ মে পর্যন্ত। ওই সময় দুর্দশায় পড়া শ্রমজীবী মানুষকে বিশেষ ওএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরের চাল দিতে রেশন কার্ডের সংখ্যা ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি করে সরকার।
মাহমুদ অভিগত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওএমএস খাতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা কেজি দরের চালের দাম ১০ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেন। পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ ওএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে। সপ্তাহে প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই চাল বিক্রি চলছিল। একজন ভোক্তা সপ্তাহে একবার পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারতেন।
কিন্তু চাল বিক্রির সময় ভিড় হলে ভাইরাসের বিস্তার বাড়ার ঝুঁকি থাকায় ১৩ এপ্রিল ওই বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এরপর ডেপুটি কমিশনারদের (ডিসি) পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা হয়, যাদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড নেই-এমন দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের তালিকা তৈরি করে কার্ডের মাধ্যমে তাদের বিশেষ ওএমএসের ১০ টাকা কেজি দরের চাল দেওয়া হবে।
বিশেষ ওএমএস চলার সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ খাদ্য বিভাগের বিপুল পরিমাণ চাল আত্মসাতের খবর আসে সংবাদ মাধ্যমে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় সরকারের অনেক জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্তও করে সরকার। সেপ্টেম্বর মাসে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে ওএমএস ডিলারশিপ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়েও আলোচনা হয়।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ওএমএস ডিলারশিপ দিয়ে বিষয়টি পরে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। ডিলারশিপ বাতিল বা নিয়োগের এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের নেই। একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত ওএমএসের ডিলার থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হলে নতুন ডিলারশিপ দেওয়া হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম