খুলনাকে পরিকল্পিত পরিচ্ছন্ন স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে ৪০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক।
ইশতেহার ঘোষণার আগে গত পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করা উন্নয়ন প্রকল্পের বর্ণনা দেন বিদায় তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ সংক্রমনের কারণে দেশের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে-যা প্রায় ৩ বছর স্থায়ী ছিল। সে কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে নগরবাসীকে হয়তো কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এবং অনাকাঙ্খিত এ বিলম্বের জন্য নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে চলমান উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে খুলনা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি স্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত হবে-ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আগামী ১২ জুন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে আমি নতুন প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার নিয়ে আমার নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরছি। কেসিসি’কে ঘিরে আমার নতুন চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা আপনারা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করি।
তালুকদার আব্দুল খালেকের ৪০ দফা ইশতেহারের প্রথমেই রয়েছে পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব খুলনা। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি নির্মাণ এবং নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সবুজ খুলনা গড়ে তুলতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন করা হবে। বাড়িভিত্তিক সবুজায়ন উৎসাহিত করা হবে। নগর পরিকল্পনায় পরিবেশকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। নগরায়ন হবে পরিবেশবান্ধব। জমি, বায়ু, শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া হবে।
ইশতেহারে দ্বিতীয় দফায় নগরীতে পার্ক-উদ্যান নির্মাণ ও বনায়ন সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দেন তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, বর্তমানে নগরীতে বিদ্যমান পার্ক ও উদ্যানগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া উন্মুক্ত সুবিধাজনক স্থানে একটি বড় পার্ক, লেডিস পার্ক ও ২টি শিশু পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং নদী সংলগ্ন স্থানে ভ্রমণের জন্য ‘ওয়াকওয়ে’ নির্মাণ করা হবে।
নগরীর দক্ষিণপ্রান্তে উপযুক্ত স্থানে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বনায়ন সৃষ্টি করে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানো হবে। এছাড়া ময়ুর নদীসহ নগরীর ২২টি খাল খনন ও সংস্কার করে এর পাশে বনায়নের মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।
৪০ দফার মধ্যে রয়েছে- পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব খুলনা গড়ে তোলা, পার্ক-উদ্যান নির্মাণ ও বনায়ন সৃষ্টি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বিশেষ ব্যবস্থা, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ড্রেন পরিষ্কার, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বৃক্ষ পরিচর্যা ও সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন অনিরাপদ স্বাস্থ্যকর খুলনা, সুলভ মূল্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা, সূর্যোদয়ের আগেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা, সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, পথচারী বান্ধব ফুটপাত, মানবিক উন্নয়নের খুলনা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উপযোগী নগরী, সিভিক সেন্টার গড়ে তোলা, অনুদান তহবিল চালু, মিডিয়া সেন্টার চালু ও সেরা সংবাদ পুরস্কার প্রবর্তন, কবরস্থান ও শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর প্রতিযোগিতার আয়োজন, স্মার্ট ডিজিটাল খুলনা, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানচিত্র প্রদর্শন, অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত খুলনা, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস মিটিগেশন সেল স্থাপন, হটলাইন নগর তথ্য কেন্দ্র চালু, পরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শক কমিটি গঠন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটানো, জলাশয় ও পুকুর গুলো সংরক্ষণ, শিশুদের সাঁতার শেখানোর বিশেষ উদ্যোগ, নগরীর বাজারগুলো আধুনিকায়ন, হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে সেবার মান বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে রাস্তার নামকরণ, বধ্যভূমিগুলোর স্মৃতি সংরক্ষণ, যাতায়াত ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা প্রদান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ, ওয়াসা, কেডিএ, রেলওয়ে, টেলিকমিউনিকেশন ও বিদ্যুৎ পরিষেবা উন্নয়ন, কেসিসিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে বুলেটিন প্রকাশ এবং খুলনা মহানগরীর সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে আড়ম্বর অনুষ্ঠানে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও এস এম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক কাজী আমিনুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা এম ডি এ বাবুল রানা, এডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারী, সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, আশরাফুল ইসলাম, শহিদুল হক মিন্টু, মুন্সী মাহাবুবুল আলম সোহাগ, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, রুনু রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এসজেড