খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৮৬৫
  ওরিয়নের ওবায়দুল করিম ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
  সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান থেকে ড. শাহদীন মালিক বাদ, নতুন দায়িত্বে অধ্যাপক আলী রীয়াজ : মন্ত্রিপরিষদ

৪০০ কোটি টাকার সেই পিয়ন পাড়ি জমালেন যুক্তরাষ্ট্রে

গেজেট ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাবেক পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে– এমন তথ্য প্রকাশের পর চলছে নানা জল্পনা। তাঁর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন, তা নিয়ে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মিলছে অঢেল সম্পদ থাকার প্রমাণ। এমন আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই গত রোববার জাহাঙ্গীর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জাহাঙ্গীরের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নাহারখিল গ্রামে। তাঁর বাবা রহমত উল্যাহ ছিলেন খিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কেরানি। এক সময় সংসারে টানাপোড়েন থাকলেও অল্প সময়ে জাহাঙ্গীরের উত্থান অনেকের কাছে আলাদিনের চেরাগের মতো। শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা থাকা অবস্থায় সুধা সদনে কাজ করতেন জাহাঙ্গীর। সেখানে আসা অতিথিদের পানি এগিয়ে দিতেন তিনি। এক সময় তাঁর পরিচিতি হয় ‘পানি জাহাঙ্গীর’ নামে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গণভবনে যাতায়াতের সুযোগ পান তিনি। এর পরই যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পান। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও নিজেকে ‘প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়েই করতেন বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য। ঘুরতেন লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে। প্রমাণসহ দুর্নীতি ধরা পড়ায় গণভবন থেকে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পরিচয় দিয়ে নোয়াখালীতে ব্যাপক আধিপত্য দেখিয়েছেন। বাগিয়ে নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নোয়াখালী-১ আসন থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। বিষয়টি জানার পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, তিনি এই দপ্তরের কেউ নন। পরে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, নোয়াখালী ও চাটখিল উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন জাহাঙ্গীর। তাঁর বড় ভাই মীর হোসেন মিরন ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মীর হোসেনকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ পাইয়ে দেন। তাঁর আরেক ভাই আলমগীর হোসেন ছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা। তাঁকেও প্রভাব খাটিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনবার খিলপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানান। আলমগীরের বিয়ের দাওয়াতে ১২ জন মন্ত্রী এবং বেশ ক’জন এমপিকে অংশ নিতে দেখেছেন অনেকে। এ ছাড়া নিজের ভাগনে মাসুদুর রহমান শিপনকে জেলা পরিষদের দ্বিতীয়বারের মতো সদস্য বানান।

চাটখিলের লোকজন জানান, জাহাঙ্গীর তিনটি বিয়ে করেছেন। তৃতীয় স্ত্রীর নামে ২০১৯ সালে নোয়াখালী শহরের হরিনারায়ণপুরে ১০ শতক জমি ও সাত তলা বাড়ি নির্মাণ করেন। এ ছাড়া চাটখিল পৌরসভার ভীরপুরে পেট্রোল পাম্প, খিলপাড়া বাজারে দোকান ভিটা রয়েছে তাঁর নামে। গ্রামের বাড়ি নাহারখিলেও রয়েছে তিনতলা বাড়ি। রাজধানীতে দামি ফ্ল্যাট, দোকান, বিভিন্ন ব্যাংক-ব্যবসায় বিনিয়োগের পাশাপাশি শেয়ারবাজারেও বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছিলেন জাহাঙ্গীর।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর চাটখিলে চলছে তোলপাড়। গতকাল নাহারখিল গ্রামে তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কেউ নেই। সব ফ্লোর তালাবদ্ধ। জাহাঙ্গীরের বড় ভাই মো. মীর হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীর রোববার সন্ধ্যায়ও দেশেই ছিল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রাতে শুনেছি, যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। তবে এখনও তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তার ব্যক্তিগত সব মোবাইল নম্বর বন্ধ।

এসব বিষয়ে জাহাঙ্গীরের বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। মোবাইলে এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!