সুন্দরবনে পহেলা জুন থেকে ৩ মাস প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় চরম বিপাকে পড়েছে জেলে পরিবারগুলো। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম ভোগান্তিতে হতদরিদ্র জেলারা। মাছ ধরার পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে সুন্দরবনে সকল ধরনের পর্যটকদের প্রবেশাধিকার।
জেলেদের বক্তব্য, জীবিকা নির্বাহ করার একমাত্র জায়গা সুন্দরবন, সেটা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাদের আত্মহত্যা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। তারা প্রশ্ন ছোড়েন, বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের যে দাম তা কিনে কি করে সংসার চালাবো? আর ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ কিভাবে মেটাবো?
পর্যটন ব্যাবসায়ীরা বলেন, মাছ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের প্রণোদনার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের জন্য কি আছে? আমরা কি করে খাবো? পর্যটনের পর্যটক ব্যবস্থা খুলে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন করেন পর্যটক ব্যবসায়ীরা।
চাঁদপাই ইউনিয়নের কয়েকজন জেলের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের প্রতি বছর এনজিও-সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মাছ, কাঁকড়া ধারার সরঞ্জাম বানাতে হয়। বছরে তিন মাস যদি সুন্দরবন বন্ধ থাকে তাহলে আমরা ঋণের টাকা কি করে পরিশোধ করবো? আর পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পোরে কি করে বেঁচে থাকবো? তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ না করে যদি এক মাস বন্ধ করতো তাহলে ভালো হতো। তাহলে আমরা একটু হলেও স্বস্তি ফিরে পেতাম।
এই বিষয়ে খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, তিন মাস সুন্দরবনের পাস-পারমিট বন্ধ থাকলে জেলেদের একটু সমস্যা হয়। তবে সরকার থেকে কোনো মতামত চাইলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, জেলেদের জন্যতো একটা রুটিন সহায়তার বিষয় রয়েছে। এদের মধ্যে যারা সমুদ্রগামী বা লিস্টেড জেলে তাদের জন্যেও এ সহায়তা রয়েছে। যদি কোন মানুষ কষ্টে থাকে তখনতো আমরা সহায়তা করে থাকি। আর পর্যটক ব্যবসায়ীরা যদি লিখিত আবেদন করেন তাহলে পর্যটন কর্পোরেশনের কাছে জানাবো।
সুন্দরবনে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩ মাসের জন্য মাছ ধরা ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী প্রজনন ঋতুতে সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পাস পারমিট বাতিল করেছে বন বিভাগ। একই সঙ্গে সুন্দরবনের ভেতরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আইআরএমপি সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ বছর মৎস্য অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞা আরো এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে শুরু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ সময় সুন্দরবনের ভেতরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে সুন্দরবনের প্রাণী ও বনজ সম্পদ আরো বৃদ্ধি পাবে। এতে সুন্দরবনের সৌন্দর্যও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এই অংশে ২১০ প্রজাতির হোয়াইট ফিস, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা এবং গলদা চিংড়ি রয়েছে। সুন্দরবনের নদী-খালগুলোতে মূলত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩ মাস মাছের প্রজনন মৌসুম। প্রতি বছরের মত এই বছর ও বন্ধ হলো সুন্দরবন। আগামী জুন, জুলাই, আগষ্ট ৩ মাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রজনন হয় বলে জানায় মৎস্য অধিদপ্তর।