খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনা জেলা বিএনপির আহ্ববায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

৩৬০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা পিকে হালদার দেশে ফিরছেন না

গেজেট ডেস্ক

তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে থাকা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) আগামীকাল দেশে আসছেন না। আগামীকাল রোববার সকালে আমিরাত এয়ার লাইন্সের একটি বিমানে পি কে হালদারের দেশে আসার কথা ছিল।

এর আগে গত ২১ অক্টোবর পি কে হালদারকে দেশে ফেরার অনুমতি দিয়ে বিমানবন্দর থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙখলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দেশে ফিরে কারাগারে আইনের হেফাজতে থেকে যাতে পি কে হালদার পাওনাদারদের টাকা পরিশোধে সহযোগিতা করতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে পি কে হালদারের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পি কে হালদার দেশে ফিরতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। আবেদনে তাঁর জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে আদালতের কাছে নিরাপত্তা চান।

আজ শনিবার বিকেলে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন আমাকে জানিয়েছেন, পি কে হালদার অসুস্থজনিত কারণে আগামীকাল দেশে আসছেন না। ই-মেইলের মাধ্যমে পি কে হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের এমডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেই ই-মেইল আমার কাছেও ফরওয়ার্ড করা হয়েছে।’

গত ২৮ জুন বিদেশে থাকা অবস্থায় পি কে হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, আইএলএফএসএল পি কে হালদারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মালিকানার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। তাঁর অনুপস্থিতি ও দেশের মধ্যে সৃষ্ট ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে’ ওইসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ‘জটিল আকার’ ধারণ করেছে। তিনি দেশে ফিরতে পারলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘সংকট কেটে যাবে’ এবং মহামারির সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ রাখতে পারবে বলে সেখানে দাবি করা হয়।

আবেদনে বলা হয়, সেজন্য পি কে হালদার ‘ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে’ দেশে ফিরতে চান এবং তাঁর সব প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আইএলএফএসএলসহ অন্য সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দায় দেনা মিটিয়ে ফেলতে চান।

পি কে হালদারের ওই আবেদন পাওয়ার পর তাঁর জীবনের নিরাপত্তায় আদালতের হেফাজত চেয়ে আবেদন করে আইএলএফএসএল। পি কে হালদার বিদেশ পালানোর পর আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি তাঁর সম্পত্তি জব্দ করা হয়। এর আগে আইএলএফএসএলে রাখা আমানতের টাকা ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে সাত ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ২১ জানুয়ারি প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচার করার ঘটনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক পি কে হালদারসহ ১৯ জনের সব সম্পদ, ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

অন্যরা হলেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক জহিরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জি, পাপিয়া ব্যানার্জি, মোমতাজ বেগম, নওশেরুল ইসলাম, আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী নরুজ্জামান, আবুল হাসেম, রাশেদুল হক, পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, ভাই প্রিতুষ কুমার হালদার, চাচাতো ভাই অমিতাব অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডে বিনিয়োগকারী দুজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে লোপাট করেছেন অন্তত তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পি কে হালদার প্রথমে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ইত্যাদি।

অভিযোগ রয়েছে, ওই সব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন এবং নতুন আরো কিছু কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছেন পি কে হালদার। নিজেও পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে মামলা করেন। তবে মামলা করার আগেই লাপাত্তা হন পি কে হালদার।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!