৩১ দফার মাধ্যমে সব অন্যায়ের জবাব দিতে চাই মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘ভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন পাওয়াই হলো জনগণের আস্থার প্রতিফলন। ভোটের মাধ্যমেই আমাদেরকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। ভোটে আস্থা অর্জন করতে হলে মুখে বললে হবে না। মানুষ জানতে চায়, আমরা তাদের জন্য কী করব।’
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক টাঙ্গাইল জেলা, গাজীপুর মহানগর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা আস্থার একটা পর্যায়ে আছি। আমাদের এই আস্থাকে ধরে রাখতে হবে। আগামীর ভোটই শুধু ভোট না। অনেকে বলে, তারেক রহমান শুধু ভোট ভোট করে। আমরা রাজনৈতিক দল, আমরা তো ভোটের কথাই বলব। আগামীর নির্বাচন করেই কী আপনি বসে থাকবেন? এখন মানুষ জানতে চায় আমরা কী করব, এখন শুধু কথায় চিড়া ভিজবে না।’
তিনি বলেন, ‘জনগণকে জবাব দিতে হবে। তাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। নির্বাচিত হলে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণকে দেখাতে হবে আপনি কী কী করতে পেরেছেন। সবটা হয়ত আমরা পারব না, তবে যতটুকু করব তা জনগণের কাছে তুলে ধরব। তখন জনগণ এর বিচার করবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের বহু সহকর্মী খুন হয়েছেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। আর কোনো রাজনৈতিক দলের এত মানুষ মারা গেছে কিনা, জানি না আমরা। গত ১৬ বছরে আমাদের দলের বহু নেতা-কর্মীর বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বললে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ভাই তাদের অত্যাচারে মারা গেছে। আমরা এই নির্যাতনের জবাব যদি তাদের মতো দিই, তাহলে হবে না। তারা অধম বলে আমরাও অধম হব না। আমরা এর জবাব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে দেব। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাদের জবাব দেয়া হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এখানে যারাই আছেন প্রত্যেকের নামে একটি হলেও গায়েবি মামলা আছে। এত নির্যাতন সহ্য করে জেল খেটেছেন আপনারা, কষ্ট করেছেন। কেন আপনারা এমন কাউকে সুযোগ দেবেন যে আপনাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দেবে। কিছু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কেন তাদের সেই সুযোগ দেবেন আপনারা?’
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাদেরও জনগণের দিকে তাকাতে হবে। আপনাদেরও বুঝতে হবে কী করলে জনগণ আপনাকে আরো পছন্দ করবে। আপনার অধীনে অনেক নেতা-কর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবারের দুষ্টু বাচ্চাদের যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয়, তেমনি দলের ভেতরও দুষ্টুরা আছে, থাকতে পারে। আমাদের এই দুষ্টুদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। এটি জনগণের দায়িত্ব না। আমরা নিজেদের সংযত রাখব এবং আমাদের সহ-কর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করব। মানুষ চায় না এমন কাজ কেন আপনি করবেন, যেখানে আপনাদের আস্থার সঙ্কট দেখা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকারবঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এর মানে হলো জনগণের বাকস্বাধীনতা ও জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। বাংলাদেশে কী হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য দেশের মানুষের সহযোগিতায় দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৬ বছর তারা নিজেদের আখের গোছাতে, ভিনদেশে তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এএজে