২৯ বছর নিজেকে আত্মগোপন করেও রক্ষা পেল না আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি। রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকার চাঞ্চল্যকর ইব্রাহিম হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তিনি। সোমবার (৬ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর মিরপুর পাইকপাড়া এলকা থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।
গ্রেপ্তারের পর সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম আজাদ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব ৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অধিনায়ক জানান, ১৯৯২ সালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার গুটিবাড়ি সরকারপাড়া এলাকায় খুন হয় ইব্রাহিম। পূর্ব শুত্রুতার জের ধরে প্রথমে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতে বড় ভাই বাদী হয়ে এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর থানায় আবুল কালাম আজাদসহ ছয় জনের নামে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে রংপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত ইব্রাহিম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়। সাজাপ্রাপ্ত তিনজন কারাগারে থাকলেও তিনি পলাতক ছিলেন।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার আবুল কালাম উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। তবে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় তিনি পলাতক ছিলেন। তিনি ১৯৮৭ সালে দাখিল, ১৯৮৯ সালে আলিম এবং ১৯৯১ ফাজিল পাস করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও কখনো তিনি চাকরিতে যোগ দেননি। ২০০৭ সালে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে বদরগঞ্জে বিয়ে করেন। তবে ছয় মাসের মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর বিভিন্ন সময় রংপুরে আত্মগোপনে থাকলেও ২০০১ সালে তিনি রাজধানীতে চলে আসেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ‘কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং’-এ নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এমনকি নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘নাম’ও পরিবর্তন করে আজাদ মিয়া রাখেন।
এতদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে ধরতে পারেনি কেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের বড় ভাই মামলা করেছিল। তবে কিছুদিন পর তিনি মারা যান। এছাড়া নিহতের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে তখন জীবিত ছিল। তারাই মামলা দেখভাল করত। কিন্তু হঠাৎই ইব্রাহিমের স্ত্রী ও ছেলে মারা যান। বাবা হত্যার সময় মেয়ে ছোট থাকায় তিনিও এই মামলার বিষয়ে তেমন কিছু জানতেন না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আবুল কালামকে ধরতে অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিল। পরে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।