সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি। এই লক্ষ্যে সীমান্তবর্তীসহ দূরের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। তবে সমাবেশের মাত্র দুই দিন বাকি থাকলেও সমাবেশস্থলের অনুমতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি পুলিশ। বিএনপি নয়াপল্টনের বাইরে যাবে না—এমন মনোভাব নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া তথ্য মতে, মূলত কয়েক দিন আগে থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আজকের মধ্যে বেশির ভাগ নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকবেন বলে ধারণা করছেন তাঁরা। সমাবেশের পর নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়াসহ নেতাকর্মীদের জন্য ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাজধানীতে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা পথে পথে বাধা দিতে পারেন। এ জন্য কর্মসূচির অন্তত দুই দিন আগে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে বলা হয়।
সীমান্তবর্তী পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় বলেন, তাঁর জেলার নেতাকর্মীদের একটি অংশ ঢাকায় চলে এসেছে। অনেকে পথে আছে। অন্যরা আজ বৃহস্পতিবার আসবে।
ফেনী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাহউদ্দিন মামুন বলেন, তাঁদের নেতাকর্মীরা এখন ঢাকার পথে আছেন। অনেকে নিজ উদ্যোগে এরই মধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
নয়াপল্টন ঘিরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে গত ২১ অক্টোবর ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। তবে এখনো মহাসমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। পুলিশের অনুমতি না পেলেও নয়াপল্টন ঘিরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। দলের একাধিক নেতা জানান, নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ হবে—এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের থাকার জায়গাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তারা গোলাপবাগ মাঠ কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি নিয়ে এগোচ্ছে। রাজধানীর মূল সড়কে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে বরাবরই অনাগ্রহ দেখিয়ে আসছে পুলিশ। ফলে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে এবার জটিলতা তৈরি হতে পারে। জামায়াতে ইসলামীও একই দিন শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর এবং গত ২৮ জুলাইয়ের বিএনপির মহাসমাবেশের স্থান নিয়ে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল। শেষ পর্যন্ত বিএনপি ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশ করে। আর ২৮ জুলাই পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়। গত ১৮ অক্টোবরও নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির মহাসমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ডিএমপি জানাবে। তবে কর্মসূচিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো বাধা দেওয়া হবে না। অবশ্য নিরাপত্তার জন্য ঢাকার প্রবেশমুখে তল্লাশি চৌকি বসানো হবে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এটাই উপযুক্ত জায়গা। এখানে আমরা একাধিকবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি।’
নেতাকর্মীদের প্রতি ৬ নির্দেশনা
মহাসমাবেশ এবং এরপর যে কর্মসূচি আসবে তা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। গত মঙ্গলবার রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে ঢাকার মহাসমাবেশের পর নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পরবর্তী কর্মসূচি পালনসহ ছয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় সম্পাদক, সহসম্পাদক, সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা সিটি/পৌর মেয়র নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে সাংগঠনিক সর্বশক্তি দিয়ে ২৮ অক্টোবরের পরবর্তী কর্মসূচির দায়িত্ব পালন করতে হবে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, গত নির্বাচনে ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী ও অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিজ এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতে হবে। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিংবা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ছাড়া সব কেন্দ্রীয় নেতা ও সদস্যকে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে সাংগঠনিক সর্বশক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
চিঠিতে বিএনপি এবং সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার সব পর্যায়ের কমিটির সব নেতা ও সদস্যকে একই নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে। জেলা, মহানগরসহ দলের সব পর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সফল করতে কাজ করার নির্দেশনাও আছে চিঠিতে। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, এবার ২৮ জুলাইয়ের মতো সারা দেশের নেতাকর্মীদের ঢাকায় রাখা হবে না। রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক কোনো কর্মসূচি দেওয়া হলে ঢাকার আশপাশের জেলা নেতাকর্মীদের তাতে সহযোগিতা নেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘ঢাকায় আগের মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এবারের মহাসমাবেশও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করব। সরকার অতীতের মতো উসকানি দিয়ে সংঘাত-সহিংসতা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপাতে চাইবে। এ নিয়ে সতর্ক থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/এইচ