খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

২৬ বছরেও শেষ হয়নি পত্রদূত পত্রিকার সম্পাদক আলাউদ্দীন হত্যার বিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা স.ম আলাউদ্দিন হত্যাকান্ডের ২৬ বছর পূর্ন হলো আজ। ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন রাতে নিজ পত্রিকা অফিসে কর্মরত অবস্থায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তিনি। কিন্তু গত ২৬ বছরেও শেষ হয়নি আলাউদ্দীন হত্যা মামলার বিচার।

এদিকে এই ২৬ বছরের মধ্যে প্রায় ২০ বছর মামলাটির আসামী পক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষের বিভিন্ন আবেদনের কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় বিচার প্রক্রিয়া স্থগীত ছিল। এরমধ্যে গত ২০১৮ সালের শেষের দিকে মামলাটি বাদী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচার প্রক্রিয়া স্থগীত হয়। পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবং উচ্চ আদালতের স্থগীতাদেশের আবেদনের চুড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া বন্ধই আছে। এছাড়া আসামী পক্ষের কোয়াশমেন্ট এবং আদালত পরিবর্তনের আবেদনের কারনে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও অ্যপিলেট বিভাগের আদেশে মামলার বিচার প্রক্রিয়া আরো প্রায় ১৫ বছর বন্ধ ছিল।

স. ম আলাউদ্দীন ১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন সে সময় সর্বকনিষ্ঠ (১৯৪৫ সালের ২১ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন) সংসদ সদস্য। ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয়দফা আন্দোলন, ১১দফা আন্দোলন, ৬৮’র গণআন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন স.ম আলাউদ্দীন। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে সরাসরি অস্ত্রহাতে যে ক’জন সংসদ সদস্য যুদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম স.ম. আলাউদ্দীন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ছিলেন সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরবর্তীতে আমৃত্যু সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে সাতক্ষীরা জেলায় তারই নেতৃত্বে প্রথম বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুল এন্ড কলেজ) গড়ে তোলা হয়। তিনি ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। এছাড়া ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এছাড়াও আরো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন তিনি। সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং পড়ালেখার সাথে নিয়মিত যোগসূত্রতা থাকা একজন রাজনীতিক ছিলেন তিনি।

১৯৯৬ সালের ১৯ জুন দৈনিক পত্রদূত অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় স. ম. আলাউদ্দীন খুন হন। ওইদিন রাতে তার মেজ ভাই স.ম নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে সদও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ৫দিন পর মামলার অন্যতম আসামী সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার কাজী সাইফুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি উদ্ধার হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন তিনি। এসময় হত্যাকান্ডের কারন এবং অন্যান্য আসামীদের নাম ঠিকানাও প্রকাশ করেন। ১১ মাস পর ১৯৯৭ সালের মে মাসে সিআইডি ১০ জনকে আসামী শ্রেণিভূক্ত করে অদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামীরা হলেন আলিপুরের আব্দুস সবুর, সুলতানপুরের খলিলুল্লাহ ঝড়ু, তার ভাই মোমিন উল্লাহ মোহন, তার আর এক ভাই সাইফুল্লাহ কিসলু, তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের আব্দুর রউফ, তার শ্যালক শহরের কামালনগরের আবুল কালাম, সুলতানপুরের এসকেনদার মির্জা ও কাজী সাইফুল ইসলাম, প্রাণসায়রের শফিউল ইসলাম শফি এবং আতিয়ার রহমান। আসামীদের মধ্যে সাইফুল্লাহ কিসলু মারা গেছে এবং আতিয়ার রহমান প্রথম থেকেই পালাতক রয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের প্রায় এক বছর পর আসামীদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে কয়েকজন আসামী উচ্চ আদালতে কোয়াশমেন্টের আবেদন করলে মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই মামলার আসামী আব্দুস সবুর, খলিলুল্লাহ ঝড়–সহ কয়েকজন সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। এর কয়েকদিন পরেই আসামীরা হাইকোট থেকে জামিন পায়। এ ঘটনার কিছুদিন পর আব্দুস সবুর ও ঝড়–সহ মামলার চারজন আসামী হাইকোর্টে কোয়াশমেন্টের আবেদন করলে আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করেন। রাষ্ট্রপক্ষ কোয়াশমেন্টের ওই আদেশের বিররুদ্ধে এ্যাপিলেট ডিভিশনে আপিল করে। দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে ওই কোয়াশমেন্টের আদেশ খারিজ হয়। কিন্তু সেই আদেশ সাতক্ষীরা আদালতে পৌছাতে সময় লাগে কয়েক বছর।

পরবর্তীতে সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হরে আসামীরা আদালত পরিবর্তনের আর্জি নিয়ে হাইকোর্টে যায়। সাতক্ষীরায় ন্যায় বিচার পাবেন না-কারণ দেখিয়ে তারা আবেদন করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে সে আবেদনও নামঞ্জুর হয়। আসামীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে যায় এ্যাপিলেট ডিভিশনে। সেখানেও দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আসামীদের আবেদন খারিজ হয়। এভাবেই কেটে যায় প্রায় ১৫ বছর। অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার সাক্ষ্য শুরু হয় ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ইতিমধ্যে মামলার ৩৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে মামলার অন্যতম সাক্ষী নিহত স. ম আলাউদ্দিনের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা বেগম সাক্ষ্য দেন ২০১৮ সালের ২১ মে। কিন্তু অভিযোগ উঠে সাক্ষীর জবানবন্দী যথাযথভাবে আদালতের নথিতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। ফলে বিভিন্ন অভিযোগে বাদী পক্ষ থেকে বিচারক পরিবর্তন করার জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়। এরফলে আবারো মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে এরমধ্যে কেটে গেছে আরো প্রায় সাড়ে ৩ বছর। এভাবে গত ২৬ বছরেও শেষ হয়নি আলাউদ্দীন হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!