‘বছর পঁচিশ আগে, হঠাৎ এক সাথে বাবা-মা দুইজনই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা কোন রোগ নির্ণয় করতে পারেন না। এক পর্যায়ে বসবাড়িসহ বাবার সামান্য জমি বিক্রি করে দেই বাবা-মায়ের চিকিৎসার জন্য। কিন্তু তারপরও তাদেরকে বাঁচাতে পারিনি। দুইজনই মারা যায় দুরারোগ্য ব্যধিতে। আমি হয়ে যাই ভূমিহীন। জীবিকার তাগিদে জন্মস্থান চাঁদপুর ছেড়ে চলে আসি বাগেরহাটে। মাজার এলাকায় ছিন্নমূল হিসেবে থাকা শুরু করি। দিনে মানুষের বাড়িতে কাজ করি আর রাতে মাজারের ঘাটে ঘুমাতাম। এক পর্যায়ে বিয়ে করে ভাড়া বাসায় থাকা শুরু করি। আজ ২৫ বছর পরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে জীবনের সব আশা পূরণ হয়েছে।’
জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন বাগেরহাট সদর উপজেলার খানজাহান (রহ) এর মাজার এলাকার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী (দুই পা অকেজো) মোহাম্মাদ মীর হোসেন।
মাজার এলাকায় বসবাস করলেও মীর হোসেনের জন্ম চাঁদপুর জেলা শাহরাস্তি উপজেলায়। ২৫ বছর আগে বাবা-মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সবশেষ সম্বল জমিসহ বস বাড়ি বিক্রি করে দেন মোহাম্মাদ মীর হোসেন। জীবিকার তাগিদে চলে আসেন বাগেরহাটে। এরপর থেকে বাগেরহাটের খানজাহান (রহ) এর মাজার এলাকায় বসবাস করেন।
পারুল বেগম নামের স্থানীয় এক নারীকে বিয়ে করে মাজার এলাকায়ই স্থায়ী হয়েছেন মীর হোসেন। কিন্তু থাকতেন ভাড়া বাড়িতে। অসুস্থ্যতার কারণে ভাড়ার টাকা আয় করতে না পারলে স্ত্রীকে নিয়ে মাজারেই রাত কেটেছে তার। একমাত্র মেয়ে বিয়ে দিলেও খুবই অসহায় জীবন ছিল পারুল ও মীর হোসেনের। জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ এই দম্পতি।
পারুল বেগম বলেন, ‘গরীবের সংসারে জন্ম। খুবই টানা পোড়েনের মধ্যে বড় হয়েছি। বিয়েও হয়েছে একজন ভূমিহীন মানুষের সাথে। দাম্পত্য জীবনে সুখ থাকলেও, সংসার ছিল অপ্রাপ্তিতে ভরপুর। এর মধ্যেই দূর্ঘটনায় স্বামীর দুই পা অচল হয়ে যায়। আসলে কোনদিন ভাবিনি নিজের বাড়ি হবে, জমি হবে নিজের নামে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জমিসহ ঘর দিয়েছেন আমরা খুব খুশি হয়েছি।’
মোহাম্মাদ মীর হোসেন বলেন, ‘২৫ বছর পরে আবারও নিজের জমিতে পাকা ঘরে থাকতে পারব এটা ভাবতে ই ভাল লাগছে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমাদের দোয়া থাকবে।’
শুধু মোহাম্মাদ মীর নয় এমন গল্প রয়েছে ভূমিহীন-গৃহহীন হিসেবে ঘর পাওয়া অনেক হতদরিদ্রদের।
ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম ২য় পর্যায়ে বাগেরহাটে ৬৪৫ টি ভূমিহীন (ক-শ্রেণির) পরিবারকে দুই শতক জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ৪৩৪টি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। উপকার ভোগীদের মাঝে ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে গেল জানুয়ারি মাসে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম প্রথম পর্যায়ে বাগেরহাটে ৪‘শ ৩৩ জন ভূমিহীনকে দুই শতক জমিসহ পাকা ঘর দেওয়া হয়েছিল।
খুলনা গেজেট/ এস আই