খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬
জেলা প্রশাসনের সতর্কতা

২৫ বছরে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৮ ডিগ্রি রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

গেল ২৫ বছরে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আজ। সোমবার (২৯ এপ্রিল) খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ৪১ দয়মিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। গত বছর এপ্রিলে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

শুধু খুলনায় নয়, গোটা বিভাগে তাপমাত্রার পারদ উর্দ্ধমুখী। দিন দিন বাড়ছে তাপমাত্রা। দাবদাহে পুড়ছে পুরো বিভাগ। আজ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, গত ২৫ বছরের মধ্যে আজ খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট করা ও গাছপালা কেটে স্থাপনা গড়ে তোলাই প্রধানত গরম বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরম অনুভুত হচ্ছে বেশি।

তিনি জানান, আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আর যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া খুলনায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, মোংলায় ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং কয়রায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে গত ১৩ এপ্রিল থেকে অর্থাৎ ১৬ দিন ধরে তীব্র তাপদাহ চলছে। টানা দাবদাহে বিপাকে পড়েছে মানুষ। অসহ্য গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি। টানা দাবদাহে নেই বৃষ্টির দেখা। ফলে বিপাকে পড়েছে মানুষ ও প্রাণীকুল। তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে খুলনায় দফায় দফায় বৃষ্টির কামনায় ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছে মুসল্লীরা। নাভিশ্বাস নেমে এসেছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না বাহিরে। গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া গরমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক স্থানে নলকূপ ও পাম্পে ঠিকমতো পানি উঠছে না।

অসহ্য গরমে পথচারী, যানবাহন চালক ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কাছে পানি, শরবত ও ফল নিয়ে খুলনার বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও তরুণ সমাজ।

নগরীর খালিশপুর বঙ্গবাসী এলাকার বাসিন্দা সোহাগ আসিফ বলেন, এমন গরম কখনও পড়েনি। এ বছর গরমের মাত্রা অনেক বেশি। পানি খেয়েও তৃষ্ণা মিটছে না। স্যালাইন ও শরবত পান করছি। বাতাসেও যেন আগুনের উত্তাপ ছড়াচ্ছে। চুলার পাশে বসলে যেমন আগুনের তাপ, ঘরে ও বাহিরে তেমনই অবস্থা।

রিকশা চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, বেশিক্ষণ রোদের তাপ সহ্য করা যাচ্ছে না। ছায়াতে দাড়ালেও বাতাসের সঙ্গে মনে হচ্ছে আগুনের তাপ আসছে। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। তিনি যেন দ্রুত বৃষ্টি দেন। বৃষ্টি না হলে গরম কমবে না।

এদিকে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে না যেতে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। করা হচ্ছে মাইকিং। এছাড়া গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাপপ্রবাহের জন্য খুলনা সিভিল সার্জনের সাথে পরামর্শক্রমে খুলনা জেলাবাসীকে নিন্মোক্ত নির্দেশনা পালনে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো-

১. বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া প্রখর রোদে বাইরে বের না হওয়া। বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে।
২. পানি শূন্যতা পরিহার করতে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
৩. সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা ও বাসি, খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
৪. ভাজা পোড়া খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
৫. ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর বার বার মুছতে হবে।
৬. শ্বাসকষ্টের রোগী ও শিশুদের বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৭. বিদ্যমান প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ/মৎস্য/ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
৮. বাস শ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমিকরা যেন বেশিক্ষণ তীব্র রোদে না থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৯. অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। এখন প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রোগী রয়েছে তিনগুণ। ফলে চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!