খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ
  সিইসিসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ
  অ্যান্টিগা টেস্ট: ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা ওয়েস্ট ইন্ডিজের, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৪০/২
মাউশির ডিজিসহ ১৩ জনের বিরেুদ্ধ আদালতে মামলা

২৩ বছর দায়িত্ব পালনের পর আক্কাস আলী জানলেন তাঁর চাকুরী নেই

এস এস সাগর,চিতলমারী

প্রতিবন্ধী আক্কাস আলী গাজী (৫৩)। শেষ সম্বল ৩০ শতক জায়গা ও গাছপালা বিক্রি করে সব টাকা তুলে দেন প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাজান আলীর হাতে। যোগ্যতা ও টাকার বিনিময়ে পিয়ন পদে নিয়োগ পান তিনি। কিন্তু ২৩ বছর বিনা বেতনে শ্রম দেওয়ার পর আক্কাস আলী জানলেন তাঁর চাকুরী নেই। প্রধান শিক্ষকের সাফ কথা হাজিরা খাতায় আর সই করা যাবে না। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই পদে অন্য লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। এমনটাই জানালেন মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কচুড়িয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মোঃ আইয়ুব আলী শেখ ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য মোঃ মুজিবুর রহমান।

তাঁরা আরও জানান, কচুড়িয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সালে স্থাপিত হয়। বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের জন্য ২৫/০১/১৯৯৯ তারিখ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তি দেখে আক্কাস আলী গাজী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির আবেদন করেন। নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ০৭/০৩/১৯৯৯ তারিখ ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাজান আলী ০৯/০৩/১৯৯৯ তারিখ আক্কাস আলী গাজীকে চূড়ান্ত নিয়োগপত্র দেন। সেই মোতাবেক তিনি ১০/০৩/১৯৯৯ তারিখে প্রধান শিক্ষকের নিকট যোগদানপত্র দাখিল করেন।

সেই থেকে তিনি বিনা বেতনে দীর্ঘ ২৩ বছর মাধ্যমিক স্তরের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর (পিয়ন) কাজ করে আসছেন বিদ্যালয়টিতে। সম্প্রতি বিদ্যালয়টির মাধ্যমিক স্তর এমপিও ভূক্তি হয়েছে। এই এমপিও ভূক্তির পর প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাজান আলী আক্কাস আলী গাজীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর চাকুরী নেই। তিনি আর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারবেন না। প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাজান আলী ওই পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় আবারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।

এ ঘটনায় নিয়োগ ঠেকাতে আক্কাস আলী গাজী প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাজান আলী,ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহা পরিচালকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সহকারি জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

আক্কাস আলী গাজীর আইনজীবী বলাই চাঁদ বিশ্বাস বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।’ মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্কাস আলী গাজী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সহায় সম্বল খুঁইয়ে ২৩ বছর শ্রম দেওয়ার পর জানলাম চাকুরী নেই। এখন প্রধান শিক্ষক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমার পদে অন্য লোককে চাকুরী দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। আমি শাররিক প্রতিবন্ধী, ডান হাত ভাঙ্গা। এখন চাকুরী হারালে ছেলে মেয়েদের নিয়ে আমার পথে বসতে হবে।’

কচুড়িয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাজান আলী বলেন, ‘স্কুল প্রতিষ্ঠায় আক্কাস আলী গাজীর অবদান অস্বীকার করি না। তাঁর টাকা দিয়ে স্কুলের জমির দলিল করা হয়েছে। তাঁর কাগজপত্রে জটিলতা আছে। তাই তাকে ওই পদে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’

চিতলমারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. কামরুননেছা বলেন, ‘আদালতের একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছি। প্রধান শিক্ষককে জবাব দিতে বলেছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, ‘এ ধরণের কোন ঘটনা আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

খুলনা গেজেট/ বিএমএস

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!