খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৩০ জুন, ২০২৪

Breaking News

  দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত
  নেপালে ভয়াবহ ভূমিধসে নিহত ৯
  ময়মনসিংহের ভালুকায় বালুবোঝাই ট্রাকে পরিবহনের ধাক্কায় বাসচালক নিহত

২৩ দিন পাহাড়ি মন্দিরে লুকিয়ে ছিলেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ

গেজেট ডেস্ক

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুনের ঘটনায় জড়িত হিসেবে এখন পর্যন্ত যাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে ফকির ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজী। এই দুজন খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। শিমুল ধরা পড়লেও ওই দুজন পলাতক ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দুজনকেই গ্রেপ্তার করতে পেরেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে মোস্তাফিজুর ও ফয়সালকে বুধবার বিকেলে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ডিবি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে পাহাড়ের পাতাল কালীমন্দিরে ২৩ দিন আত্মগোপনে ছিলেন ওই দুজন। মন্দিরের লোকজনের কাছে মোস্তাফিজ নিজের পরিচয় দেন শিমুল রায় নামে। ফয়সালের পরিচয় ছিল পলাশ রায়।

পাতাল কালীমন্দির এলাকা থেকে দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। ডিবি বলছে, এই দুজন সংসদ সদস্যকে খুনে সরাসরি অংশ নেন। খুনের ১১ দিন আগে তাঁরা বাংলাদেশ থেকে ভারতের কলকাতায় গিয়ে সেখানকার নিউমার্কেট এলাকার ‘হোটেল প্লাজা’য় ওঠেন। খুনের ছয় দিন পর তাঁরা ঢাকায় ফিরে আত্মগোপনে চলে যান।

গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিকেলে ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, কলকাতা থেকে দেশে ফিরে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল বারবার তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। সর্বশেষ তাঁরা হিন্দুধর্মাবলম্বী পরিচয় দিয়ে আশ্রয় নেন পাতাল কালীমন্দিরে। সেখানে তাঁরা ২৩ দিন ছিলেন। সীতাকুণ্ড-খাগড়াছড়ির পাহাড়ের দিকে ওই দুজন অবস্থান করছেন—এমন তথ্য ছিল ডিবির কাছে। ওই পাহাড়ি এলাকায় হেঁটে পৌঁছাতে সাত-আট ঘণ্টা লাগে। ওই এলাকা থেকেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পাতাল কালীমন্দিরের অবস্থান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল ইউনিয়নের জঙ্গল শোভনছড়ির দুর্গম পাহাড়ের নিচে গভীর জঙ্গলে। সেখানে যেতে হলে প্রথমে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামের ভূমি থেকে এক হাজার ফুট ওপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের একটি চূড়ায় উঠতে হয়। এরপর ছোট-বড় কয়েকটি টিলা পার হওয়ার পর গভীর জঙ্গলে অবস্থিত ওই মন্দিরে যেতে হয়।

মন্দির কমিটির সহসভাপতি ঝলক বিশ্বাস বলেন, দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে গভীর জঙ্গলের এই মন্দিরে আসার পর অনেকে ক্লান্ত হয়ে যান। তাই অনেকে মন্দিরে রাত যাপন করেন। সংসদ সদস্য খুনের ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি মন্দিরের পুরোহিত তাঁকে জানিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া দুজন সাধারণ ভক্তদের মতো করে সেখানে কিছুদিন ছিলেন। তাঁরা যে খুনের মামলার আসামি কিংবা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক নন, তা বুঝতে পারেনি কেউ। তাঁরা প্রার্থনায় বসতেন, প্রসাদও গ্রহণ করতেন।

সংসদ সদস্য খুনে মোস্তাফিজুর ও ফয়সালের ভূমিকা নিয়ে ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আনোয়ারুল আজীমকে অচেতন করতে তাঁর ওপর চেতনানাশক ব্যবহার করেছিলেন ফয়সাল। অন্যদিকে খুনের আগে আনোয়ারুলকে চেয়ারে বেঁধে ফেলার কাজটি যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মোস্তাফিজুরও।

কলকাতা পুলিশ সূত্র জানায়, যেদিন আনোয়ারুল খুন হন, সেদিন বেলা ১টা ৪০ মিনিটে কলকাতার বরাহনগরের মণ্ডলপাড়া লেনের বন্ধুর বাসা থেকে বের হয়ে একটি গাড়িতে ওঠেন। ওই গাড়িতে আগে থেকেই ছিলেন ফয়সাল। তিনি সংসদ সদস্যকে নিয়ে নিউ টাউন এলাকার ‘অ্যাক্সিস মল’-এর কাছে যান। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে দুজনই গাড়িটি থেকে নেমে অন্য আরেকটি গাড়িতে ওঠেন। তখন তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন শিমুল ভূঁইয়া। দ্বিতীয় যে গাড়িতে আনোয়ারুল উঠেছিলেন, সেই গাড়ি মোস্তাফিজুরকে নিয়ে ভাড়া করেছিলেন ফয়সাল। এই তিনজন (আনোয়ারুল, মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল) বেলা ৩টা ৫ মিনিটে নিউ টাউনের ‘সঞ্জিভা গার্ডেনস’-এ যান। পরে ভবনের একটি ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। এই ফ্ল্যাটে খুন হন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল।

খুনের এই ঘটনায় ঢাকায় করা মামলার তদন্ত করছে ডিবি। তারা বলছে, খুনের সঙ্গে জড়িতদের ধারণা ছিল, লাশ গুম করতে পারলে এটি শেষ পর্যন্ত নিখোঁজের ঘটনা হিসেবে থেকে যাবে। তবে তদন্তে খুনের ঘটনার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মো. আক্তারুজ্জামান গত ২০ মে ঢাকা থেকে প্রথমে দিল্লি যান। তাঁর অবস্থান এখন যুক্তরাষ্ট্রে বলে ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানতে পেরেছে। অন্য আসামিদের মধ্যে মো. সিয়াম হোসেন ও জিহাদ হাওলাদার গ্রেপ্তারের পর ভারতে আছেন।

ডিবি বলছে, দেশ ছাড়ার আগে আক্তারুজ্জামান অন্য দুই আসামি মোস্তাফিজুর ও ফয়সালকে ৩০ হাজার টাকা দেন। এই টাকা নিয়েই দুজনে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় চলে যান।

সংসদ সদস্য খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়া, তাঁর ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও খুনের সময় কলকাতায় অবস্থান করা আরেক নারী শিলাস্তি রহমান আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এবার গ্রেপ্তার হলেন মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল। দুজনের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। শিমুলের বাড়িও একই এলাকায়।

খুনের এই ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম (মিন্টু) এবং একই কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদকেও গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯ জন গ্রেপ্তার হলেন। এর মধ্যে ভারতে আছেন দুজন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!