২২ বছরেও শেষ হয়নি যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলা। একজন আসামির হাইকোর্টে স্থগিত চেয়ে করা রিটের চূড়ান্ত আদেশ না আসায় যশোর স্পেশাল জেলা জজ আদালতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে রয়েছে। নিহতের স্বজন ও যশোরের সাংবাদিকরা অবিলম্বে মুকুল হত্যার বিচার ও আসামিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ দাবি নিয়েই রবিবার সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের ২২ তম হত্যাবার্ষিকী পালিত হবে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, যশোরের প্রথিতযশা সাংবাদিক ও দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে শহর থেকে বেজপাড়ায় বাড়ি যাবার পথে খুন হন। দুর্বৃত্তরা তাকে শহরের চারখাম্বার মোড়ে বোমা হামলা চালায়। পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এক পর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে মামলার বিচারিক কার্যক্রম থমকে যায় এবং চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি হাইকোর্ট থেকে স্থগিত করে দেয়া হয়।
দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ থেকে মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সিআইডির এএসপি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দুই জনের নাম অন্তর্ভূক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জগঠন করা হয়। এসময় হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে।
পরে সাংবাদিক মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করে ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে রিট আবেদন করেন। উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ফের মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক অভিযুক্ত ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।
মামলার স্বাক্ষী গ্রহণ শেষে ফারাজী আজমল হোসেনের হাইকোর্টে করা অব্যহতির আবেদনের নিস্পত্তি সংক্রান্ত আদেশ সংশ্লি¬ষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয় তার আইনজীবীকে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর অতিবাহিত হলেও হাইকোর্টের এ আদেশ এখনো এ আদালতে এসে পৌঁছায়নি। ফলে মামলার কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত হয়ে আছে। হাইকোর্টের আদেশ পেলে আর্গুমেন্ট শেষে দ্রুত এ মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে আদালত সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এম ইদ্রিস আলী জানান, হাইকোর্টের এ বিষয়ে আদেশ পাওয়া গেলে যুক্তিতর্ক শেষে দ্রুত রায় পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে, সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে), সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর ও যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ, শোকর্যালি, শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।